কোনভাবেই থামছে না তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন । ভুমিদস্যুদের করাল থাবায় গতিহীন হয়ে পড়ছে খরস্রোতা তিস্তা । ফলে অসময়েই তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। হুমকিতে পড়েছে আবাদি জমি-বসতভিটাসহ নানা স্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে,লালমনিরহাটের আদিতমারীতে টিআর প্রকল্পের রাস্তার কাজে তিস্তা নদীতে অবৈধ মেশিন বসিয়ে বালু তুলে ভরাট করেছেন মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুর আলম। নদীতে মেশিন বসিয়ে বালু উঠানোয় অসময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আবাদী জমি ও বসতভিটা।
এছাড়াও ওই ইউপি সদস্য নদী থেকে কমপক্ষে তিন জায়গায় বালু তুলে ব্যবসা করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিজের ভাইয়ের ভিটেতে বালু তোলার কথা জানান অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্য। তবে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, মেশিন দিয়ে বালু তোলার সংবাদ পেয়েই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড তিস্তা নদী ঘেঁষা। এর অনেকাংশ তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বন্যায় ওই এলাকার চলাচলের একটি কাঁচা রাস্তায় একাংশে ভাঙন হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। সেটি সংস্কারে টিআর প্রকল্পের এক লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয় ওই ওয়ার্ডের সদস্য নুর আলমকে।
স্থানীয় গরীব অসহায়দের মাধ্যমে মাটি কেটে তা ভরাটের নিয়ম থাকলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে তিস্তা নদীতে অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে দীর্ঘ পাইপ দিয়ে বালু তুলে তা ভরাট করেন। সেই সুযোগে ১৮ থেকে ২০ দিনে ৩ থেকে ৪টি স্থানে বালুর উঁচু স্তুপ করে সেখান থেকে বালু বিক্রিও করছেন। পরে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে অবৈধ মেশিন বন্ধ করা হয়।
এদিকে তিস্তার তীর ঘেঁষে দীর্ঘদিন এভাবে বালু উত্তলনের পরে এই এলাকায় অসময়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাতারাতি পাকা ধানক্ষেত নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত থাকায় পাশের কয়েকটি বাড়িঘর ও ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েক বিঘা জমি। টিআর প্রকল্পের এক লাখ টাকার কাজ নদী থেকে বালু তুলে ভরাট করে কৌশলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজেটের এক কিস্তি পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলেও নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। বাকি টাকা তোলার তোড়জোড় করছেন সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
তিস্তার তীরের বাসিন্দারা বলেন, নদী ভাঙিয়া সব শেষ হয়া গেছে। এখানে দশ হাজার টাকা দিয়া জমি বন্দক নিয়া বাড়ি করি আছি। বালু তোলায় হঠাৎ এই সময়ে ভাঙতেছে। ভিটেটা ভাংগি গেইলে কোনটে যামো ঠিক নাই। ভয়ে কোনো কথাই বলা যায় না।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুর আলম বলেন, আমি ভাইয়ের পাঁচ শতক জমিতে বালু তুলেছি। বালু তোলায় অসময়ে ভাঙন হয়েছে তা স্বীকার করতে অপারগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমনি এমনি নদী ভাংতেছে।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তাকে কয়েকদিন অফিসে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। পরে অফিসে ডাকলেও তিনি আসেননি। নদী থেকে বালু তুলে প্রকল্পের কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বালু তোলার বিষয়টি ইউএনও দেখবেন। এই উপজেলায় কোনো সিন্ডিকেট নেই।
Leave a Reply