যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য ও করোনার অতিমারীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। চিরাচরিত কোলাকুলি আর করমর্দন ছাড়াই এবার একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে। একই সঙ্গে বিশেষ মোনাজাতে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাশ্মীরসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন বন্ধসহ মুসলিম উম্মাহর হেফাজতে আল্লাহর কাছে অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা করেন মুসল্লিরা।
শুক্রবার (১৪ মে) সকাল নয়টায় নয়টায় জেলার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় রংপুর কারামতিয়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। এতে কয়েক হাজার মুসল্লি শারীরিক দূরত্বে থেকে নামাজ আদায় করেন। মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়াতে বাইরেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় ঈদের বিশেষ খুতবা। খুতবা শেষে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় ঈদ জামাত।
এছাড়া সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর কোর্ট মসজিদে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ছাড়াও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্টজন এবং সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তিসহ দেশে শান্তি-সমৃদ্ধি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সম্প্রীতি কামনায় মোনাজাত করা হয়। এর আগে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার, সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসক।
এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মন্ত্রীপাড়া জামে মসজিদে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা গঙ্গাচড়া পাকুরিয়া দরবার শরীফ জামে মসজিদে, রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক তার নিজ এলাকার চৌধুরিপাড়া জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নগরীর ধাপ লালকুটি বাইতুল নুর জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায়, কারমাইকেল কলেজ জামে মসজিদে সকাল ৯টায়, রাধাবল্লভ তাকওয়া জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টা ও সাড়ে ৯টায়, পুলিশ লাইন জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, শাপলা চত্বর আশরাফিয়া জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। রংপুর সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়াও পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়ায় স্থানীয় মসজিদগুলোতে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সুবিধাজনক সময়ে ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
রংপুর জেলার প্রায় ৬ হাজার মসজিদে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সুবিধাজনক সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। কোনো কোনো মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মসজিদে ঈদের জামাত শেষে মোনাজাতে মহান আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে মহামারি করোনা থেকে মুক্তির ফরিয়াদ জানান ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। পরে কোলাকুলি আর করমর্দন ছাড়াই সালামের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন।
ঈদ উপলেক্ষে সিটি করপোরেশন থেকে নগরীর সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক লেখা পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে জেলার হাসপাতাল, এতিমখানা, কারাগার ও শিশু পরিবারগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালায় ঈদ আনন্দে মাতি সবাই, ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে, ঈদ আড্ডা, ঈদের নাটক আনন্দ আনন্দ প্রচারিত হবে।
Leave a Reply