রংপুর সংবাদ ডেস্কঃকুমড়া চাষে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার স্বপ্নে বিভোর তিস্তার চরাঞ্চলের চাষীরা। লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে কুমড়ার চাষ।
গত রবিবার সরেজমিনে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার ধু-ধু বালুচরে এখন শুধুই সবুজের সমরোহ। মিষ্টি কুমড়ার লতা আর ঢলঢলে পাতা বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে গেছে।
নিবিড় সবুজের ভেতর উঁকি দিচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের মিষ্টি কুমড়া। এর মধ্যে কোনটি পাকতে শুরু করেছে আবার কোনটি পেকে উঠেছে।
ওইসব কুমড়াগুলোর গায়ের নীলচে আভা সেই সাথে হলুদ ফুল যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। বালাপাড়া ইউনিয়নের ৭নং তালুক শাহবাজ গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবার তিস্তার চরাঞ্চলের পতিত জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আসছে।
লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে কুমড়া চাষ। আগে যেখানে চরাঞ্চলের মানুষজন সন্তানদের লেখাপড়া করা তো দূরের কথা ঠিকমতো দু’বেল দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করাই তাদের দুস্কর হয়ে পড়তো।
বর্তমানে এই মিষ্টি কমড়া চাষ করে তারা তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলাসহ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়া চরাঞ্চলের এইসব মানুষজন।
মিষ্টি কুমড়া চাষী মতিয়ার রহমান, মোক্তার আলী স্বাধীন, বাবলু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন, মারুফ হোসেন, মজিবর রহমান, আব্দুস সামাদ, প্রফুল্ল বর্মন, আশরাফুল ইসলাম, সুরেষ রায়, আমিনুল ইসলাম, মালতী রায়, পার্বতী বর্মন, হাসিনা বেগমসহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা জানান, দেশে কৃষি জমি কমে আসছে। তিস্তার চরাঞ্চলের জমি বছরের প্রায় ৭ মাস পতিত থাকে। এ সময় এখানে অনায়াসে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা যায়। তারা আরও জানান, চরাঞ্চলে কুমড়া চাষ করে বছরে তারা দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। কুমড়া বিক্রির আয় থেকে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়াশুনার খরচ চলে।
মালতী রায় নামের এক চাষী রংপুর সংবাদকে জানান, চলতি বছর তিনি ও তার স্বামী মিলে ১৮০টি গর্ত খুঁড়ে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করেন। প্রতিটি গাছে এখন ৫-৭টি করে মিষ্টি কুমড়া ধরেছে, যার প্রতিটির ওজন ২ থেকে ৫ কেজি। এ কাজে তাদের সন্তানরাও সাহায্য করেছে। তিনি আরও জানান, এবার কুমড়া চাষে তার ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। তবে তার আশা, এবার তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবেন।
কুমড়া চাষী মোক্তার আলী জানান, তিনি এবার আড়াই একর জমিতে গর্ত খুঁড়ে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এর মধ্যে অনেক গাছে কুমড়া ধরেছে। তার সন্তানরাও এ কাজে তাকে সাহায্য করছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারও কৃষকদের মুখে হাসি ফুটবে।
এ ব্যাপারে কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন চরাঞ্চলের মানুষজন মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকে পড়ছে। বিষ মুক্ত কুমড়া চাষ করেই তারা আজ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।
আপনার মতামত লিখুন :