বর্তমান সময়ে যারা জীবন জীবিকার তাগিদে যে মানুষ গুলো গাইবান্ধার বাইরে রয়েছেন। অল্পকিছুদিন পর যখন তাঁরা নিজ শহরে আসবেন।এটা নিশ্চিত যে,তারা ভাববেন ভুল করে অন্য কোন শহরে এসে পড়েছেন কিনা? হ্যা, তেমন আকর্ষনীয় রুপে সাজতে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় শহর গাইবান্ধা। বলছিলাম ,মঙ্গা কবলিত সেই গাইবান্ধা জেলার স্বপ্নের ফোরলেন সড়কের কথা।
এ ফোরলেন কাজ হবে স্থায়ী উন্নয়নের অংশ কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছায় হচ্ছে ফোরলেনের দেখানো ফোরটুয়েন্টি দৃশ্য। এ ফোরলেন প্রকল্পে রাস্তার মাঝে যে ডিভাইডার তৈরী করা হয়েছে সেটা প্রকল্পের নকশার সাথে ব্যাপক সাংর্ঘষিক বিশেষজ্ঞ জন মনে করেন , এ ফোরলেন সড়কের মাঝে যে পরিমাণ জায়গা জুড়ে ডিভাইডার তৈরী করেছেন তা করা মোটেও ঠিক হয়নি। এ দিকে সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক উক্ত প্রকল্পের নকশার বাহিরে প্রকল্পের কাজ করায় ও নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করার ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এ প্রকল্পের তদারকির সাথে জড়িতদের সড়ক ও জনপদ বিভাগ গাইবান্ধার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন গাইবান্ধা জেলার সর্বস্তরের মানুষ ।
এ ফোরলেন নির্মাণ কাজ শুরু থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ছোট বড় অভিযোগ গুলো একত্রিত হয়ে জন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে । জেল খানার মোড়ে গোলচত্বর ও ড্রেন নির্মাণ দেখে তাই মনে হচ্ছে। ১ নং ট্রাফিক মোড় থেকে কাচারী বাজার পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। সেখানে অধিগ্রহণ জায়গার বাইরে ১ ফুট এদিক ওদিক হলো না। অথচ জেলখানার মোড়ে ব্যতিক্রম হলো গাইবান্ধা জেলখানা মোড়ে প্রকল্পের নকশার ব্যতিক্রম করে ৭ ফুট দক্ষিনে ড্রেন সরানো হয়েছে। ঠিকাদারের লোক বলছে পুলিশের চাপে করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ বলছে ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক ঘেঁসে ড্রেন হবে। ৭ ফুট দক্ষিনে ড্রেন সরালে তা হবে একনেক অনুমোদিত নকশা বহির্ভূত। সড়ক হবে সংকুচিত। দক্ষিনে সরাতে গেলে ৭ ফুট জায়গা নতুন করে অধিগ্রহণ করা লাগবে। এই অবস্থায় ড্রেন হলে কলহ বিবাদ হবে দক্ষিণ পাশের জমি মালিকদের সাথেসর্বদা। এছাড়া ড্রেনে আউটফল (ড্রেনের পানি নিষ্কাশন) উদ্যোগে অপরদিকে চলমান প্রকল্প ঘাঘটলেকে ফেলার পায়তারা করছে।
যা চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ঘাঘটলেক ও ফোরলেন প্রকল্পের সাংঘর্ষিক তবুও হচ্ছে কাজ এমন অবস্থায় সচেতন জনসাধারণ অনিয়মের মধ্যে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে এ কাজের প্রতিবাদ করায় অবশেষে এ নির্মান কাজ স্থগিত করেছেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ গাইবান্ধা। গাইবান্ধাবাসীর প্রানের দাবী রাস্তা প্রসস্থকরন ফোরলেনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, রাতের বেলায় কাজের তড়িঘড়ি,ইচ্ছে মতো স্বেচ্ছাচারী,কাজের ধীরগতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সামান্য প্রতিবাদ করলেই হামলা মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অনিয়মের ধারাবাহিকতায় আজ দিনের বেলায় নিম্নমানের ইট ও সামগ্রী দিয়ে গোল চক্করের নির্মাণ কাজ চলাকালে সাধারণ জনতার প্রতিবাদে স্পটে উপস্থিত হয়ে নির্মান কাজ স্থগিতের নির্দেশ দেন সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার।
অনেক জটিলতা,অনেক শ্রম আর অনেক প্রতীক্ষার পর খুব দৃশ্যমান হচ্ছে যাচ্ছে ফোরলেন সড়কের কাজ। আর এজন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাতে হয় জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপিকে। যিনি এই কাজটিকে এগিয়ে নিতে তিনি দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করেছেন। কখনও কখনও নিজেই ফাইল নিয়ে এই ভবন থেকে সেই ভবন,এই মন্ত্রী থেকে ওই সচিব দৌড়ঝাপ করেছেন। আরও ধন্যবাদ জানাই সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আসাদদুজ্জামানকে। তিনি আমাদের এই শহরকে একেবারে নিজের শহর ভেবে কাজ করে চলেছেন। ফোরলেনের কাজের অনুমোদনের এবং ক্ষতিপুরনের অর্থ বরাদ্দের চুড়ান্ত এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে তাদের ভুমিকা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার ।
সেইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাতে হয় সাবেক পৌরসভার মেয়র শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন কে। তিনি পৌর শহরের ব্যবসায়ীদের সাথে একাধিক বৈঠকসহ ভুমি সংক্রান্ত নানা সমস্যা নিরসনে মেয়র প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। আর সেইসাথে গাইবান্ধাবাসীকেও ধন্যবাদ না জানালেই নয়। কারণ তারা এ প্রানের দাবি নিয়ে তারাই ছিলেন সব সময় সোচ্চার। এই দাবি পুরনের জন্য গাইবান্ধাবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচী পালন যেমন করেছেন, তেমনি জনপ্রতিনিধি আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদেরও দাবির কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। সকলের পরিশ্রম সার্থক হতে চলেছে খুব শীঘ্রই কাজ শেষ হলেই দেখা যাবে সেই দৃষ্টি নন্দন পৌর শহরের দৃশ্য। তবে এ দৃশ্যের থাকবে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্চাচারিতার স্মৃতি ।
উল্লেখ্য,সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ ও দু’পাশে ১৮ ফুট করে প্রস্থ ধওে চারলেন এই সড়কে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪’শ ০৫ কোটি টাকা। এর মাঝে ১’শ ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে মুল সড়কে আর বাকি টাকা ব্যয় হবে জমি অধিগ্রহন, বিদ্যুৎ লাইন, পৌরসভার পানি লাইন, বিটিসিএল লাইনের পাইপ সরানো এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়ে। প্রথমে শহরের রেলগেট থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত কাজ করা হবে। এই অংশের মোট ২.১৫৫ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। মোট ২’শ ৬৪ টি স্থাপনার মুল্য দ্বিগুনহারে এবং জমির অবস্থান ও বাজার দও অনুযায়ী তিনগুন হারে টাকা প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে ডিসি অফিস থেকে রেলগেট পর্যন্ত কাজ করা হবে। এই অংশের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৯ কোটি টাকা। পুরো কাজটি বাস্তবায়ন করবে এমএমবিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের জুন মাসে এই মেগা প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। চারলেন সড়কের মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন বনায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন করবে জেলা পরিষদ। পুরাতনবাজার ও বড়মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়একটি দর্শনীয় গোলচত্বর নির্মাণ করাহবে। আর সমস্ত কাজ শেষ হবার পর সত্যিই আমাদের প্রানের শহর প্রিয় শহর গাইবান্ধা সাজবে নতুন রুপে। এই রুপ অবলোকন করবার জন্য আমাদের আর অল্পকিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে। সেই সাথে নতুন মাত্রা সৃষ্টি হবে যোগাযোগ ব্যবস্থাতে।
Leave a Reply