পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া উপজেলার তৃতীয় শ্রেনী পড়ুয়া এগারো বছরের শিশু সুমি আক্তার। বাবার অভাবের সংসারে কোন মতে লেখাপড়ার তেমন সুযোগ-সুবিধা পায়না সে। এরই মাঝে প্রস্তাব আসে তেতুঁলিয়া উপজেলার সাবেক এবং মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বর্তমান পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবিএম শাহিনুজ্জামান শিশিরের বর্তমান কর্মস্থল মানিকগঞ্জের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতে হবে। কাজের পাশাপাশি লেখাপড়া শেখানোর কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। কিন্তু এর দুই মাস যেতে না যেতেই শিশুটির উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। এমনই লোমহর্ষক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবিএম শাহিনুজ্জামান শিশিরের স্ত্রী আশরাফী জেমি বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার ওই শিশুটি এখন তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। টানা এক সপ্তাহ জুড়ে শিশুটিকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করে শিশুটি। হাত-পা থেকে শুরু করে শিশুটি সারা শরীরে জখমের কারণে কালো কালো ছাপ দেখা দিয়েছে। শিশুটিকে বর্তমানে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে ওই পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দাবি রোগের কারণে শিশুটির হাত পায়ে দাগ হয়েছে। সুমি আক্তার তেতুঁলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া এলাকার দবিরুল ইসলামের মেয়ে।
শিশুটির পরিবার অভিযোগ করে জানায়, সুমিকে আড়াই মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে নতুন কর্মস্থল মানিকগঞ্জে নিয়ে যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার সাবেক পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শিশির। নেয়ার পর শিশুটির উপর ভারি কাজ চাপিয়ে দেয় শিশিদের স্ত্রী আশরাফী জেমি। ভালভাবে কাজ করতে না পারলেই মারধর করতো জেমি। গত ১৫ দিন আগে সে হাত পা বেঁধে সুমিকে মারধর করে। এমনকি খাটের পায়ার সাথে বেঁধে রাখে। তার চিৎকারে এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করে। মারধরের কারণে হাত পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে জখম হয় বলে দাবি করে শিশুটি ও তার পরিবার। পরে শিশুটি তার বাবার কাছে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তিনি শিশুটিকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান তারা। গত সোমবার (০৭ জুন) সন্ধ্যায় শিশুটিকে পঞ্চগড়ের উদ্যেশে গাড়িতে তুলে দেন শিশির। পরে (০৮ জুন) মঙ্গলবার সকালে শিশুটি তেঁতুলিয়ার নিজ বাসায় পৌঁছে। তার এই অবস্থা দেখার পর পরই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে পরিবারের লোকজন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে শিশুটির বাবা দবিরুল ইসলাম। বর্তমানে শিশুটি হাসাপাতালের বেডে শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। যখনি মারধরের কথা মনে করছেন আতঁকে উঠছে সুমি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়েছে তার পরিবারের লোকজন সহ স্থানীয়রা।
নির্যাতনের শিকার শিশু সুমি আক্তার জানায়, আমাকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারি ভারি কাজ করতে দিতো। আমি কাজ করতে না পারলেও মারধর করতো। ১৫ দিন আগে আমার হাত পা বেঁধে রুটি বানানোর বেলন দিয়ে মারধর করে জেমি মেডাম। প্লাস দিয়ে আমার দাঁত তুলে ফেলতে চাইলে আমি ভয়ে দৌড় দিয়ে বাথরুমের ভেতর গিয়ে দরজা আটকে দেই। তখন তারা আমাকে বাথরুমেই আটকে রাখে। এক পর্যায়ে আমার চিৎকারে নিচতলার মানুষরা এসে আমাকে উদ্ধার করে। আমাকে অনেক মেরেছে জেমি মেডাম। আমি এর বিচার চাই।
সুমির বাবা দবিরুল ইসলাম বলেন, ওই কর্মকর্তার কোন সন্তান নেই। তারা আমার মেয়েকে নিয়ে যায় নিজের মেয়ের মতো লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করবার জন্য। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই তারা আমার মেয়ের যে এই হাল করবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আঘাতের কারণে মেয়েরা পুরো শরীরে কালো কালো ছাপ পড়ে গেছে। আমি আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।
মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবিএম শাহিনুজ্জামান শিশির বলেন, সুমিকে আমরা খুব আদরেই রাখতাম। কিন্তু হঠাৎ সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আমি তাকে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার বলেছে যে তার এলার্জির মতো সমস্যা রয়েছে। তাই শরীরে কালো কালো দাগ পড়েছে। এখানে নির্যাতনের শিকার হলে আমরা তো এই অবস্থায় তাকে ফেরত দিতাম না, সুস্থ্য করে দিতাম। সত্যিকার অর্থে সে অসুস্থ্য তাকে কোন মারধর করা হয়নি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া বলেন, ওই শিশুটি নির্যাতনের বিষয়ে মামলা করতে হলে তাদের ঘটনাস্থল মানিকগঞ্জের সিংগাইরেই করতে হবে। আমরা তাদের বলেছি যে তারা সেখানে মামলা করতে চাইলে আমরা এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো।
Leave a Reply