রংপুরের মিঠাপুকুরে এক ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারন মানুষকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার দৌরান্তে এলাকাবাসি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছে অন্যায়ভাবে টাকা দাবি করেন। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে গ্রামবাসিকে হয়রানী করে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কথিত ওই সাংবাদিকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসি।
গতকাল উপজেলার পাইকান গ্রামে শুক্রবার বিকেলে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।
সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তির নাম কামরুজ্জামান মিলন। তিনি উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের পাইকান গ্রামের মৃত. আবদুস সালামের ছেলে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় গ্রামবাসি সাজু মিয়া, তাজনুরি বেগম, শানিন মিয়া, আকমল হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কামরুজ্জামান মিলন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করার জন্য ভাড়া করা গাড়িতে চড়ে ক্যামেরা নিয়ে দলবদ্ধভাবে হাজির হন। এরপর বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট ব্যক্তি ও আশপাশের কিছু ছবি তুলে বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। অন্যথায় খবর প্রকাশ-প্রচার করার হুমকী দেন। তিনি নামসর্বস্ব বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিচয়পত্র বহন করে থাকেন। তাঁর সাথে থাকে আরও কয়েজকন সাঙ্গপাঙ্গ। দিনে যা আয় হয়-নিজেদের মধ্যে সেই টাকা ভাগ করে নেন।
মানববন্ধনকারীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এমন প্রতারণা করে আসছে এই ভুয়া সাংবাদিক চক্র। তাদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন জনসাধারন। অবশেষে তার দৌরাতœ থেকে রেহাই পেতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসি। রাস্তা বন্ধ করাসহ আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করে গ্রামবাসির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সাংবাদিক পরিচয় ব্যাবহার করে পুলিশকে প্রভাবিত করে গ্রামবাসিকে হয়রানি করছেন। প্রকৃতপক্ষে পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত কয়েকজন লোক চার শতক জমি বিক্রি করেছেন। বিক্রি করার পর দখল স্বত্ব বুঝে দিতে তাদের জমির গাছ নিজেরাই কেটে জমি ক্রয়কারীর নিকট জমি বুঝে দিয়েছেন।
কামরুজ্জমান মিলনের বাড়ির কাছে একটি জমি আলম, আবু বকর, হারুন, জিয়ারুল, রাশেদ, র্মোশেদা, শাহেদা সহ ৯ জন পৈতৃকসুত্রে প্রাপ্ত হন। এরপর তারা কামরুজ্জামান মিলনসহ তার পরিবারের সাথে একাধিকবার সেই জমি কিনে নিতে বলেন। এরপর আজ নিব কাল নিব করে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন মিলন। পরে জমির মালিকেরা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ গন্যমান্য লোকজন নিয়ে একাধিকবার বিষয়টির কোন সুরাহা করতে পারেননি। অবশেষে তারা দুলাল মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া ও তার স্ত্রী মুঞ্জুরা আক্তার নুপুরের নামে দলিলমূলে চার শতক জমি তাদের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর রায়হান জমিতে বাড়ি করতে গেলে কামরুজ্জামান তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বাধা প্রদান করেন। সাংবাদিক পরিচয় ব্যাবহার করে পুলিশের মাধ্যমে তাদেরকে হয়রানি করার পাশাপাশি নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। তার এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসি। তার হয়রানী থেকে রেহাই পেতে মানবন্ধন করে ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান মিলন বলেন, কাউকে হয়রানী করিনি। মানববন্ধন যারা করেছে, তারা আমার প্রতিপক্ষ।’ তিনি আরও বলেন, আমি সাংবাদিকতা করি। অনলাইন নিউজপোর্টাল ও টিভি চ্যানেল সেভেন বিডি এর বিশেষ প্রতিনিধি। কিন্তু এ পরিচয়ে কাউকে হুমকী বা ভয়ভীতি দেখাইনি। কারো কাছে টাকাও দাবি করিনি। এটা মিথ্যা অভিযোগ।’
রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ( ডি সার্কেল, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ) কামরুজ্জামান বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মিলন নামে এক ব্যক্তি গ্রামবাসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছেন তা সঠিক নয়। অভিযোগটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। আর ওই ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্নস্থানে মানুষকে হয়রানী ও চাঁদা দাবি করার ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply