নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হওয়া ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সংগঠিত উপায়ে ছাত্র রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। শুক্রবার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মাঈন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, স্বৈরাচার হাসিনা খেদানোর আন্দোলন থামাতে সরকারি নির্দেশের আজ্ঞাবহ হয়ে গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সিন্ডিকেট সদস্যরা শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল, তারাই আবার ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে! বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে, এই অপচেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যান্টনমেন্ট বানানোর পাঁয়তারা।
এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম এবং সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি জানান, গত প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফোরামও আজ্ঞাবহ দলদাসে ভরে ফেলা হয়েছে। ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্যদের বেশিরভাগই যে আওয়ামী আজ্ঞাবহ তার প্রমাণ মিলে গত ১৭ জুলাই। আন্দোলন সরকার পতনের এক দফার দিকেই যাচ্ছে, তখন ঢাবির আওয়ামী সিন্ডিকেট সরকারি আদেশে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার, শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেয় হল ছাড়তে। সেই একই সিন্ডিকেট যখন দুই মাসের মাথায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সংগটিত মত-অমত-দ্বিমত প্রকাশের রাস্তা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকে না। ঢাবির দলকানা সিন্ডিকেট হয় এখনও আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত নয়তো তারা নতুন প্রভুর সন্ধান পেয়েছে।
নেতৃবৃন্দ জানান, গণঅভ্যুত্থান সফল করার লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থে দীর্ঘসময় প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন একই বয়ানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে হাজির ছিল। নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে দাঁড়িয়ে তারা লড়েছে ছাত্র-জনতার সাথে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। দুঃখের বিষয়, সহস্রাধিক মানুষের রক্তের উপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে এবং ভিন্নমত ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম দমনে পূর্বতন স্বৈরাচারের অস্ত্র ও কৌশল প্রয়োগ করছে। এই বাস্তবতায় গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণকারী হিসেবে শিক্ষার্থীরা যখন নিজ নিজ আদর্শিক অবস্থান থেকে সংগঠিত উপায়ে প্রতিবাদ শুরু করেছে, তখনই স্বৈরাচার হাসিনার প্রতি আজ্ঞা জানান দিয়ে ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্য হওয়া ব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সংগঠিত উপায়ে ছাত্র রাজনীতি করার অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে! কর্তৃত্বের কানাগলিতে আলো ফেলে ক্ষমতার দূরভিসন্ধিকে জনগণ ও শিক্ষার্থী সমাজের সামনের আনার দক্ষতা একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে তৈরি হয় সাংগঠনিক রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে। ঠিক এখানেই ঢাবি সিন্ডিকেট ও অন্তর্বর্তী সরকারের ভয়। তারা প্রায় ১৬ বছর স্বৈরচারী কায়দায় ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার দেখানো পথেই তাই হাঁটছে! আমরা তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, স্বৈরাচারের দেখানো পথে হাঁটলে পরিণতি মিলে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে উঠতে দেরি করবে না।
নেতৃবৃন্দ আরও জানান, বাংলাদেশের জন্ম ও বেড়ে উঠায় ছাত্র রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব দেশ চলার পথও ঠিক করেছে অসংখ্যবার। ফলে যে সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা মানুষের রাজনৈতিক, মানবিক অধিকারের চেয়ে ঢের গুরুত্বপূর্ণ, তারাই ছাত্র রাজনীতিকে টেন্ডারবাজি, দখল-লুটতরাজ, খুন-খারাবিতে যুক্ত করেছে নিজেদের স্বার্থে। আর সেই সব গোষ্ঠীর মিডিয়া ও ভাড়াটে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা টেন্ডারবাজি, দখল-লুটতরাজ, খুন-খারাবিকে সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত না করে অভিহিত করেছে ছাত্র রাজনীতি হিসেবে। এই কুচক্রী প্রচারণাকারীরাই ঔপনিবেশিক মনের কাছে বন্দী সমাজে জনপ্রিয় করে তুলেছে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের আলাপকে। এই তৎপরতায় সমর্থন জোগাতে দেখা যাচ্ছে আড়ালে থেকে নিজেদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নে অভ্যস্ত ও পারদর্শী একটি চক্রকেও। সেই মহলটিই অরাজনৈতিক পোশাকে নিজেদের ঢেকে সবচেয়ে নোংরা রাজনীতিকে চাল চালছে।
নেতৃবৃন্দ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা, গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে সকল ছাত্র সংগঠন নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কার্যত স্থিমিত রাখলেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে লাশ পড়তে, মব ভায়োলেন্স তৈরি করে একের পর এক খুন চলতে, দেশব্যাপী মাজার-মন্দিরে আর পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর হামলা হতে। ফলে এ কথা বলার সুযোগই নেই যে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে ক্যাম্পাস শান্ত থাকবে, দেশ ভালো থাকবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে, স্বৈরাচারমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করতে এবং ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে দলকানা মনোবৃত্তিপ্রসূত প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ঠেকাতে আর নতুন ফ্যাসিস্টের জন্ম রুখতে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি চর্চার সুযোগ অবারিত রাখার কোনো বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে, স্বৈরাচার খেদানোর লড়াইয়ে সেনা-পুলিশ-বিডিআর-আওয়ামী দোসরদের গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া প্রতিটা বুক ভয়ের সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়েছে। সেনা এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক মুনাফালোভী গোষ্ঠীর কাঁধে দেশকে তোলে দেওয়ার প্রচেষ্টা যেকোনো মূল্যে শিক্ষার্থীরাই ঠেকাবে, ক্যাম্পাসে ও দেশে জলপাই রঙা আঁধার নামানোর পাঁয়তারা শিক্ষার্থীরাই রুখে দিবে। কাজেই বারংবার বাংলাদেশের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়ানো সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করে সভা-সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সামরিক বেসামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের এখতিয়ার দেওয়া সরকারকে আমরা ২০০৭-২০০৮ সালের আগস্ট ছাত্র বিদ্রোহের ইতিহাস পুনঃপাঠের আহ্বান জানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, স্বৈরাচারের দোসর সিন্ডিকেট অবিলম্বে পাল্টান এবং শিক্ষার্থীদের সংবিধান প্রদত্ত রাজনৈতিক অধিকার, সংগঠনকেন্দ্রিক রাজনীতি করার অধিকার খর্ব করার অপচেষ্টা থেকে সরে আসুন, অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করুন। ৭১ ও ২৪ এ যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জন্ম তাদের সাথে খবরদারি দেখানোর দুঃসাহস করবেন না।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: আলহাজ্ব নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় | সম্পাদক: রেজাউল করিম মানিক | অফিস: ২য় তলা, দৌলত কমপ্লেক্স, গুপ্তপাড়া, রংপুর