আদালত প্রতিবেদক:
ব্যবসায়িক ক্ষোভ থেকেই ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কেউ যাতে বুঝতে না পরে এ জন্যই দেশের বাহিরে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে জানানো হয়েছে তিন আসামির রিমান্ড আবেদনে।
আবেদনে বলা হয়, এমপি আজীমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে হত্যার মূলপরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক আছে। ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আজিমের ওপর শাহিনের ক্ষোভ ছিল। যা তিনি (আজীম) জানতেন না। এছাড়াও শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আজীমের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। তাই তারা পরিকল্পিতভাবে আজীমকে দেশের বাইরে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন যেন কেউ বুঝতে না পারে।’
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সহকারি পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান গ্রেপ্তার তিন আসামি আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলেস্তা রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে তাদের ৮ দিনের রিমান্ডে পাঠান ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, পলাতক আসামি শাহীন গ্রেপ্তার আসামিদের সাথে নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় যান। সেখানে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করা শুরু করেন এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে সেখানে থাকা অবস্থায় আজীমকে ব্যবসায়িক বৈঠকের কথা বলে কলকাতায় যেতে বলেন শাহীন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শাহীন গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসে এটা আজীম জানতেন না।
আবেদনে আরও বলা হয়, দেশে ফেরার সময় শাহীন আসামি আমানুউল্লাহকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন কোনোভাবেই যেন ‘কামটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ না থাকে’। গত ১২ মে আজীম ভারতের কলকাতায় যান এবং তাঁর এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালের দিকে তিনি নিউটাউনের সেই ভাড়াবাসায় যান। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক আসামি আমানউল্লাহ, তানভীর, সেলেস্তিসহ অজ্ঞাতনামা অন্যান্য পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় আজীমকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর লাশের মাংস ও হাড় আলাদা করে গুম করে ফেলা হয়, যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। আসামিরা পরবর্তীতে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ১৩ মে থেকে নিখোঁজ হন এমপি আজীম। আনোয়ারুল আজীমের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান তিনি। ১৩ মে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে জানান, দিল্লি যাচ্ছেন। এরপর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। কলকাতা পুলিশ বুধবার জানায়, আজিম খুন হয়েছেন। একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও জানান, সংসদ সদস্য আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আনোয়ারুল আজীম ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রী ফেরদৌস ইয়াসিন শেফালী ও ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কালীগঞ্জে থাকেন। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা দুজনেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। আজীমের বড় মেয়ে অরিনের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আলাদা থাকেন।
এ ঘটনার পর বুধবার সংসদ সদস্য আজীমের খোঁজ চেয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। হত্যায় জড়িত সন্দেহে ওই দিনই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: আলহাজ্ব নুরুজ্জামান আহমেদ, মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় | সম্পাদক: রেজাউল করিম মানিক | অফিস: ২য় তলা, দৌলত কমপ্লেক্স, গুপ্তপাড়া, রংপুর