মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট-বাল্কহেড সংঘর্ষে ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় সেই স্পিডবোটটির মালিককে অবশেষে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার নাম চান্দু বেপারী। বাড়ি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ এলাকায়।
এ ঘটনায় ওই স্পিডবোট মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ শিমুলিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষ।
বিআইডাব্লিউটএ শিমুলিয়া ঘাটের বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, স্পিডবোটের মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাকে শনাক্ত করা গেছে। তার নাম ঠিকানা পেতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য স্পিডবোট চালকদের কাছ থেকে মালিকের বিষয়ে তথ্য পেয়েছি।
তিনি আরো জানান, আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও ঘাটের তদারকির বিষয়টি প্রশাসনের মাধ্যমে করি। যেকোনো ম্যাসেজ যখন আমরা পাই, যেমন প্রতিকূল আবহাওয়া বা নদী উত্তাল থাকলে আমরা ঘাটে নৌ চলাচল বন্ধে নৌপুলিশে সহযোগিতা নিই। লকডাউনেও তাদের বলা হয়েছে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল বন্ধের জন্য। তারপরও বিক্ষিপ্তভাবে চলাচল চলছিল। দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোটটিও তেমনই একটি।
স্পিডবোট ও চালকের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কিছু স্পিডবোটের নিবন্ধন দিয়েছে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। তবে দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিবন্ধন থাকুক আর নাই থাকুক দুর্ঘটনা যেহেতু ঘটেছে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকায় সোমবার সকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে উল্টে যায় যাত্রীবোঝাই একটি স্পিডবোট। সেখান থেকে একে একে উদ্ধার করা হয় শিশুসহ ২৫ জনের মরদেহ। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরো একজন। জীবিত উদ্ধার করা হয় পাঁচজনকে।
শিমুলিয়ার নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, ‘উল্টে যাওয়া স্পিডবোটটির নিবন্ধন ছিল না। চালকের যোগ্যতা সনদও নেই। এই নৌ-রুটের বেশির ভাগ নৌযানের একই অবস্থা’।
এদিকে সোমবার (৩ মে) রাতে স্পিডবোটটির মালিক-চালকসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ঘাটের ইজারাদারও রয়েছেন। তবে চালক ছাড়া অন্য আসামিদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি।
এ ঘটনায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
যাঁরা মারা গেছেন তাঁরা হলেন-
খুলনার তেরখাদার বারুখালীর মনির মিয়া (৩৮), হেনা বেগম (৩৬), সুমী আক্তার (৫) ও রুমি আক্তার (৩), ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার চরডাঙ্গা গ্রামের আরজু শেখ (৫০) ও ইয়ামিন সরদার (২), মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সাগর ব্যাপারী (৪০), কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউসার আহম্মেদ (৪০) ও রুহুল আমিন (৩৫), কুমিল্লার তিতাসের জিয়াউর রহমান (৩৫), মাদারীপুরের রাজৈরের তাহের মীর (৪২), মাদারীপুরের শিবচরের হালান মোল্লা (৩৮) ও শাহাদাত হোসেন মোল্লা (২৯), বরিশালের তেদুরিয়ার আনোয়ার চৌকিদার (৫০), মাদারীপুরের রায়েরকান্দির মাওলানা আব্দুল আহাদ (৩০), চাঁদপুরের উত্তর মতলবের মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার রাজাপুরের জুবায়ের মোল্লা (৩৫), মুন্সীগঞ্জ সদরের সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের সায়দুল হোসেন (২৭) ও রিয়াজ হোসেন (৩৩), ঢাকার পীরেরবাগের খোরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটির এস এম নাসির উদ্দীন (৪৫), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিরোজপুরের চরখামারের মো. বাপ্পি (২৮) ও পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার জনি অধিকারী (২৬)। অপর নিহত যাত্রী বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের মনির হোসেন জমাদ্দারের (৩৫) নাম নিশ্চিত হলেও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
Leave a Reply