রংপুর অফিস:
রংপুর বিভাগে গত পাঁচ বছরে মাছ উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাড়লেও এখনো ঘাটতি রয়েছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। রংপুর অঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিলে এক সময় ২০০ প্রজাতির মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশগত কারণে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ।
ফলে মানুষের মাছের অপর্যাপ্ততায় আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৫৮টি উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে মাছের একাধিক অভয়াশ্রম। বিশেষ করে দেশি মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
রংপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৮ জেলায় দেড় কোটির ওপর মানুষের বাস। একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিনে মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মাছ খেতে পারছে না মানুষ। ফলে সারা বছরই মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
প্রতি বছর এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরিতে এ বছর উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। তিস্তার উজানে বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে জলশূন্যতা বিরাজ করছে। দিনাজপুর অঞ্চলের কাঁকর ও বালিযুক্ত মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কম।
সর্বত্রই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এই অঞ্চলে পানি স্বাদু হওয়ায় মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগ। সূত্র মতে, বিভাগে অর্ধশত নদী, খাল প্রায় ৪ লাখ হেক্টর, ৮৩৭টি বিলে ৪০ হাজার ২৮৮ হেক্টর, ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭০২টি পুকুরে ১২ হাজার ২৬৯ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হয়। বর্ষাকালে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সৃষ্টি পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় জলাশয়গুলোতে পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। দারি, টিলা, কালা বাটা, ঘোড়া, পুঁটি, বোল, চিতল, গজার, রিটা, বট শিং, ঘাউড়া, সালবাইম, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা ইত্যাদি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসলেও কিছু কিছু মাছের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। রংপুর মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও মেরামত, সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া মৎস্যকে যান্ত্রিকীকরণের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply