স্টাফ রিপোর্টার:
রংপুরের পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেনের ঘুষ বাণিজ্য, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের পূর্বক হয়রানিসহ নানা দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছে সাধারণ মানুষজন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওসিকে অপসারণ করাসহ তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (৬ মে) সকালে পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। ওসি জাকির হোসেনের মাধ্যমে হয়রানির শিকার অসহায় মানুষের পক্ষে ‘পীরগঞ্জের জনগণ’ লেখা ব্যানারে এই মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ওসির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বিক্ষুদ্ধরা বলেন, পীরগঞ্জ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের আইনি সেবা ও নিরাপত্বা প্রাপ্তির অন্যতম আস্থার জায়গা পীরগঞ্জ থানা। অথচ সেখানে পুলিশের যোগসাজোসে দালালদের কারণে এখন সাধারণ মানুষজন নিরাপদ নয়।
বক্তারা আরও বলেন, ওসি জাকির হোসেন যোগদানের পর থেকেই ঘুষ বাণিজ্য শুরু করে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মামলা রেকর্ড, বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছেন ওসি।
সম্প্রতি ঘুষ নেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ওসি জাকির হোসেনকে প্রত্যাহার করা (ক্লোজড) হলেও এখনও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। ওই প্রত্যাহার আদেশ পাওয়ার পরেও রহস্যজনকভাবে ওসি জাকির হোসেন স্বপদে বহাল থেকে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক চাঁদাবাজি মামলা দায়েরসহ নানাভাবে অসহায় মানুষকে হয়রানি করছেন বলে ভুক্তভোগীরা মানববন্ধনে অভিযোগ তুলে ধরেন।
ওসি জাকির হোসেন পীরগঞ্জ থানায় দায়িত্বরত থাকলে আরও অনেকে হয়রানির শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার অপসারণ দাবি করেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করাসহ পীরগঞ্জ থানাকে দালালমুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছে।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছার রহমান, সুলতান মাহমুদ, ওয়ালিউর রহমান রুপম, আলতাব হোসেন, রিপন মেম্বর, উজ্জল, দেলওয়ার হোসেন, পুলিন চন্দ্র, আল-আমিন প্রমুখ। এসময় ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে শতাধিকের নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা বিভিন্ন অভিযোগ ও দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন।
এদিকে ওসি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে এক বালু ব্যবসায়ীর কাছে ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত ২৪ এপ্রিল জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওসি জাকির হোসেনকে পীরগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একটি কমিটিও করা হয়। কিন্তু এখনও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
উল্টো গত ২৯ এপ্রিল ওসি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা বানোয়াট ও পরিকল্পিত ভিডিও’ প্রকাশের প্রতিবাদে এবং ওসির বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধন থেকে আয়োজনকরা জানায়, ওসি জাকির হোসেন পীরগঞ্জ থানায় যোগদানের পর উপজেলায় মাদক, জুয়া এবং অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওসির বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রমূলক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। পুরো বিষয়টিকে কতিপয় বালু ব্যবসায়ীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে ওসির বদলি আদেশ বাতিলের দাবি জানান তারা।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ওসি জাকির হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গত ২৯ এপ্রিল ওসিকে ক্লোজড করার পরও থানায় বহাল তবিয়তে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদেশের কপিতে কবে রংপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত হতে হবে এটা লেখা নেই, অবিলম্বে আদেশ কার্যকর করার জন্য বলা হয়েছে। আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে আদেশ অনুযায়ী পীরগঞ্জ থানার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত হবো।
Leave a Reply