1. rkarimlalmonirhat@gmail.com : Rezaul Karim Manik : Rezaul Karim Manik
  2. maniklalrangpur@gmail.com : রংপুর সংবাদ : রংপুর সংবাদ
সহস্রাধিক ভাঁটার ধোঁয়া আর বালুকণায় ভারী রংপুরের বাতাস - রংপুর সংবাদ
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির ৮০ ভাগ নেতা-কর্মী নির্যাতনের শিকার: মির্জা ফখরুল ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে বজ্রবৃষ্টির আভাস বিএনপি নেতারা বহাল তবিয়তে ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন: কাদের  ঈদযাত্রায় রেলপথে জোরদার হচ্ছে টহল-পাহারা আওয়ামী লীগ এখন সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ ছড়াচ্ছে: ফখরুল আদিতমারী সীমান্তে গুলিবিদ্ধ আহত বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যু রোজায় বেড়েছে দাম, খরচ যোগাতে ক্রেতার নাভিশ্বাস স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে ২৯ বছরই ছিল দুর্ভাগ্যের : প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-যারা ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলছেন তাদের বউদের ভারতীয় শাড়ি কয়টা?

সহস্রাধিক ভাঁটার ধোঁয়া আর বালুকণায় ভারী রংপুরের বাতাস

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৬৩ জন নিউজটি পড়েছেন

আমিরুল কবির সুজন,সিনিয়র রিপোর্টারঃ

রংপুর ১৬ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটারের এই বিভাগে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ইটভাঁটা। যার মধ্যে ৮৬৭ ভাঁটারই আবার নেই কোনো ছাড়পত্র। হাজারখানেক ইটভাঁটার কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভারী হয়ে ওঠেছে রংপুরের বাতাস।

কেবল রংপুর জেলার হিসাব ধরলেও প্রতি ১০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়ে আছে অন্তত একটি ইটভাঁটা। হাজারখানেক ইটভাঁটার প্রতিটির অবস্থানই আবার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও ফসলি জমির ওপর। নিয়মিত নজরদারি না থাকার সুযোগে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ছোট-বড় আরও ইটভাঁটা। ভাঁটাগুলোর কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বাস করছে জেলার ৩১ লক্ষাধিক এবং বিভাগের দেড় কোটি মানুষ।

মূলত কৃষিপ্রধান হলেও উত্তরাঞ্চলের বাতাসে আগের তুলনায় দূষণের মাত্রা বেড়েছে অনেক। শিল্পকারখানা না থাকলেও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে রংপুরের বাতাস। যার জন্য মূলত দায়ী ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা সহস্রাধিক ইটভাঁটা। বায়ুমান সূচকে রংপুরের বায়ুদূষণ মাত্রা সম্প্রতি ৪৩৫ পর্যন্ত উঠেছে। যেখানে বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ দূষণের মাত্রা ৫০০। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবাদে প্রতিকার মেলে না। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর পরিবেশ অধিদফতরের অজুহাত লোকবল সংকট।

জানা গেছে, পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম-১০ ও পিএম-২.৫), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড ও ওজোনসহ পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয় বায়ুমান। মান শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত থাকলে সেটিকে বলা হয় বিশুদ্ধ বায়ু। এরপর ৫১ থেকে ১০০ মোটামুটি, ১০১ থেকে ১৫০ সতর্কতামূলক, ১৫১ থেকে ২০০ অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পর্যন্ত বায়ুমানকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রংপুরে চলতি মাসে বায়ুমান নির্ণয় করা হয়েছে ৩১৬।

এ ব্যাপারে রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, রংপুর বিভাগে কলকারখানা না থাকলেও বায়ুর দূষণমাত্রা অত্যন্ত বেশি। অগণিত ভাঁটার কারণে কৃষিপ্রধান এই বিভাগের জেলাগুলোতে দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন, তাপমাত্রা দ্রুত কমে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া, তীব্র তাপদাহ, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টিসহ শীতকালে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটছে।

পরিবেশ অধিদফতরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র বলছে, বিভাগের আট জেলায় ১ হাজার ১৮টি ইটভাঁটার মধ্যে শুধু ১৫১টি বৈধ। বাকি ৮৬৭টি ইটভাঁটা নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রংপুর জেলাতেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাঁটা। এ জেলায় ইটভাঁটা রয়েছে ২৪০টি। এর মধ্যে মাত্র ২৮টির রয়েছে ছাড়পত্র। বাকি ২১২টি ইটভাঁটার সঠিক কাগজপত্র নেই। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে ভাঁটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে ইট, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কাঠ।

আর ইট তৈরির অধিকাংশ মাটি ও বালু জোগান দিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। এসব মাটি তোলা হচ্ছে বিভাগের নদ-নদী থেকে। এ ছাড়া ইট পোড়ানোর জন্য অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর এই কাঠের চাহিদা পূরণে সিন্ডিকেট গড়ে উজাড় করা হচ্ছে বনাঞ্চল। দিনের পর দিন প্রভাবশালীরা পরিবেশের ওপর তাদের এই নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এলেও নীরব সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ ইটভাঁটার কালো ধোঁয়া আর ধূলিকণায় ভারী হয়ে আসছে বাতাস। তবুও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মনীতি। রাস্তাঘাটগুলো হয়ে ওঠেছে ধূলিময়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের তিন ফসলি এসব জমির ওপর জমছে আশপাশের ইটভাঁটা থেকে উড়ে আসা ক্ষতিকর ছাই-ধুলা। ভাঁটাগুলোতে কয়লার বদলে পোড়ানো কাঠের ধোঁয়া ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশ-বাতাসে। এ ছাড়াও আইনের তোয়াক্কা না করে দাপট খাটিয়ে নদ-নদীর শত শত স্পট থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মেট্রিকটন বালু লুটছেন প্রভাবশালীরা। নদী পাড়ের ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে নদীর বুকে।

মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, যমুনেশ্বরী নদীর পাশের গ্রামেই আমার বাড়ি। নদীর পারে বেশকিছু জমিও আছে। প্রতিদিন নদীর বালু বিক্রি হয়। জমিতে বালুর আস্তর পড়ে আবাদ নষ্ট হয়। ভালো ফলন হয় না।

এদিকে মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষেরই হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যানসার, মাতৃগর্ভে ভ্রূণের ক্ষতি, শিশুর বুদ্ধিমত্তা বিকাশ ব্যাহত হওয়াসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত এই বায়ুদূষণ কমানো না গেলে এখানকার নাগরিকরা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও মিলছে না প্রতিকার। কোনো এক অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।

রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী শিরিনা আকতার বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হলেই ধুলাবালি আর ভারী বাতাসে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর রেজিস্ট্রার ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু জানান, রংপুরে উন্নয়নমূলক কাজে সৃষ্ট ধুলাবালি, ইটভাঁটা ও তামাকের কারখানা বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। এর ফলে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, হাঁপানি এবং সিওপিডি রোগী বাড়ছে। সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীদের সারা জীবন ওই রোগে কষ্ট পেতে হচ্ছে।

এসব ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (উপসচিব) সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, একেকটি ভাঁটা একবার করে পরিদর্শন করলে পুনরায় সেটি পরিদর্শন করতে তিন-চার বছরেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভিযান পরিচালনার সময় উচ্ছেদকার্য চালাতে খননযন্ত্র অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের কার্যালয়ে নিজস্ব কোনো খননযন্ত্র নেই। জনবল সংকটসহ এমন নানা প্রতিকূল অবস্থাতে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে সাধ্যমতো দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | রংপুর সংবাদ.কম
Theme Customization By NewsSun