কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ভিজিডির নতুন নামে চালু হওয়া ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের নাম ভাগাভাগি, টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত ও যাচাই-বাছাই ছাড়া তালিকা তৈরিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নীতিমালার তোয়াক্কা না করা, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা। এর প্রতিকার চেয়ে রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেন তারা।
জানা গেছে, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর পরিচালিত ভিডব্লিউবি ২০২৩-২০২৪ চক্রের আওতায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে মোট ৩ হাজার ২৫৩টি কার্ড বরাদ্দ হয়। এর বিপরীতে অনলাইনে আবেদন পড়ে মোট ১২ হাজার ৪০০টি। প্রতি উপকারভোগী ৩০ কেজি করে চাল পাবেন দুই বছর। তবে অনলাইনে আবেদনকারীদের কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকা জমা দেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। এ প্রকল্পে অসচ্ছল, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা থাকলেও তা মানা হয়নি। ভাগাভাগি করে নেওয়া হয় ভিডব্লিউবির নাম। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ৬%, দুই ভাইস চেয়ারম্যান ৬%, প্রতিমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ মিলে ২৩% এবং ৬ ইউনিয়ন ৬৫% ভাগাভাগি করে নেয়। ভাগাভাগির পর চলে কার্ড বিক্রির প্রতিযোগিতা। প্রতি কার্ড বিক্রি হয় ৫-৮ হাজার টাকায়। এতে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
যাদুরচর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহমুদুর রহমান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ময়নাল হক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, যাদুরচর ইউনিয়নে মোট ৫৫০টি নাম বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে ৩৫৮টি নাম ভাগে পায় ইউনিয়ন পরিষদ। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যদের না জানিয়ে, সভা না ডেকে, কোনো প্রকার রেজুলেশন ছাড়াই নিজের ইচ্ছামতো নামগুলো ভাগ করে নেন চেয়ারম্যান সরবেশ আলী। এতে ভিডব্লিউবি প্রকল্পে তাদের নির্বাচনি এলাকার অসহায় হতদরিদ্ররা এ সুবিধা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। সরকারি এ সুযোগ-সুবিধা থেকে হতদরিদ্ররা যাতে বাদ না পড়ে এ জন্য সঠিক যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়নের দাবি জানান ওই ইউপি সদস্যরা।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ভিডব্লিউবির তালিকা ওই ইউপি সদস্যদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ভেতরে তারা তালিকা জমা দেননি। পরে তাদের দেওয়া তালিকা ছাড়াই মূল তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় টাকার বিনিময়ে নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ওই চেয়ারম্যান বলেন, এসব বিষয়ে লেনদেন করেও কোনো উপকারভোগী খোলাখুলি বলেন না।
টাকার বিনিময়ে নাম অন্তর্ভুক্ত ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডব্লিউবি প্রকল্পের সদস্য সচিব ও রৌমারী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জেবুন নেছা বলেন, কারও অভিযোগ থাকলে সে ব্যাপারে উপজেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ইউপি সদস্যদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
ভিডব্লিউবির নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৫-৮ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রকল্পের সভাপতি ও রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. পূবন আখতার বলেন, দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply