রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে সবচেয়ে বেশী হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া।
ভোটের আগে এ দুই প্রার্থীকে নিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডায় ছিল আলোচনা। কে হচ্ছেন নগরীর অভিভাবক এ নিয়ে সর্বস্তরে বিশ্লেষণও কম হয়নি কিন্তু সবকিছুই যেন এলোমেলো হয়ে গেছে ভোটের ফলাফলে। আলোচনায় থাকা জাপা প্রার্থী মোস্তাফা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করলেও জামানত হারিয়েছেন আ.লীগ প্রার্থী ডালিয়াসহ ৭ জন মেয়র প্রার্থী।
হিসাব মতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে মোট বৈধ ভোটের আট ভাগের এক ভাগ থেকে অন্তত একটি ভোট বেশি পেতে হতো। অর্থাৎ তাঁকে অন্তত ৩৪ হাজার ৩৯৩ ভোট পেতে হতো। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট। আ.লীগের প্রার্থী ডালিয়া ভোটের ফলাফলে নিজ কেন্দ্রেও হেরেছেন। নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৯২ ভোট। এই ভোট কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৬৬ ভোট পেয়ে প্রথম হয়।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত ভোটার তালিকা থেকে জানা গেছে, রসিক নির্বাচনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩৬।
এই নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হয়ে ৯ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এছাড়াও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যারা জামানত হারিয়েছেন তারা হলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম ৫ হাজার ৮০৯ ভোট, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল ২ হাজার ৮৬৪ ভোট, স্বতন্ত্র মেহেদী হাসান ২ হাজার ৬৭৯ ভোট ও জাসদের শফিয়ার রহমান ৫ হাজার ১৫৬ ভোট করে ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবার রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার ছিল। ২২৯টি কেন্দ্রে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে ৩০নং ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।
দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী লাঙ্গল প্রতীকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
Leave a Reply