লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের অধিনে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চলাচল করলেও দীর্ঘ ৩ বছরেও ট্রেনটিতে খাবার গাড়ি লিজ দেয়া হয়নি। তৎকালিন রেলওয়ের ঊচ্চপদস্থ তিনজন কর্মকর্তা অবসরে গেলেও ট্রেনটিতে এখনো তারাই পরিচালনা করছেন খাবারের হোটেল। ফলে সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের প্রশ্ন রয়েছে তেমনি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বর্তমান বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪টি বিভাগের মধ্যে লালমনিরহাট অন্যতম। লালমনিরহাট রেল বিভাগের আওতাধীনে প্রতিদিন চলাচল করছে কয়েকটি আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। এসব আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীদের জন্য রয়েছে খাবার হোটেলের ব্যবস্হা। এসব খাবার গাড়ি বার্ষিক লিজ দিয়েও রাজস্ব আদায় করছে সরকার।
প্রতি বছর রেলওয়ে কতৃপক্ষ সব বিভাগের আন্তঃনগর ট্রেনের খাবার গাড়ি দরপত্রের মাধ্যমে সর্বচ্চ দর-দাতার নামে বার্ষিক লিজে বরাদ্দ দেন। কিন্তু ১৮২টি আসনের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটির জন্মলগ্ন থেকে খাবার গাড়ির কোন দরপত্রই আহবান করা হয়নি। রেল বিভাগের নাম করে খাবার গাড়ি রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে ডিডি-৩ কালীকান্ত দাস চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারী এবং সাইদুর রহমান চলতি বছরের অক্টোবরে অবসর গ্রহন করেন। তারা অবসরে গিয়েও রেলে ব্যবসা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ গাড়ির খাবারের মান নিয়েও যাত্রীদের বিস্তার অভিযোগ রয়েছে। ৫০-৬০ গ্রামের একপিস কর্ক মুরগির মাংস, একটা সিদ্ধ ডিম, হাফ প্লেট পোলাও, একটি পানির বোতল ও একটি কাঁচা মরিচ দিয়ে নেয়া হচ্ছে ১৭০ টাকা। যা বাজারে ৯০-১০০ টাকায় মিলে। নাস্তাতেও একই ভাবে গলাকাটা দাম নেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের।
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের রংপুর আলমগরের একটি পরিত্যাক্ত বাসায় খাবারের রান্না ঘরে গিয়ে দেখা যায়, পামওয়েল দিয়ে রান্না হচ্ছে যাত্রীদের খাবার। কুডিগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি বড় হওয়ায় খাবার গাড়ি রয়েছে দুইটি। রান্না হয় রংপুর ও ঢাকায়। সকাল ৭টায় কুড়িগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং পুনরায় ফিরে আসে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক রেলওয়ের একজন কর্মচারী দাবি করেন, ট্রেনটি চালুর দিন রেল ভবনের তিনজন ডিপুটি ডাইরেক্টর (ডিডি)-৩ কালীকান্ত দাস, সাইদুর রহমান ও এডিজি (অপারেশন) মিয়াজান পরীক্ষামুলক ও রেলের নাম করে নিজেরাই লিজ নিয়েছেন। যার কারনে এ খাবার গাড়ির কোন তথ্যই নেই রেল বিভাগে। এ কারনে এ গাড়ির খাবারের মান বা আয় ব্যায় নিয়েও খবর রাখেন না কেউ।
তবে এ ট্রেনের খাবার গাড়ির দায়িত্বে থাকা সৌরভ ঘোষ বলেন, রেলওয়ের দেয়া মুল্য তালিকা অনুযায়ী খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। এ ট্রেনের খাবার গাড়ি রেলওয়ে পরিচালনা করছে। আমরা খাবার পরিবেশনকারীরা রেলওয়ের কর্মী নই। তবে আলাদা ভাবে আমাদেরকে মজুরী দেয়া হয়।
রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ১ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাবার গাড়ি প্রতিবছর দরপত্রের মাধ্যমে সর্বচ্চ দরদাতাকে নির্ধারীত মুল্যে মানসম্পন্ন খাবার বিক্রির শর্তে লিজ দেয়া হয়। তবে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের খাবার গাড়ির কোন তথ্য বা চিঠি আমাদের কাছে নেই।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগিয় ম্যানেজার আব্দুস সালাম বলেন, সকল আন্তঃনগর ট্রেনের খাবার গাড়ি বার্ষিক লিজ দেয়া আছে এবং সেখান থেকেও রেলের আয় হচ্ছে। সদ্য যোগদান করায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের খাবার গাড়ির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply