দিনাজপুরের বেলান নদীর উপর একটি রাবার ড্যামের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে চাষিদের। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে যখন কৃষকরা চিন্তিত, তখনই এ নদীর উপর নির্মাণাধীন রাবার ড্যামের কাজ শুরু হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
জেলার খানসামা উপজেলার ভাবকী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া বেলান নদীর উপর নির্মাণাধীন রাবার ড্যামে সেচের আওতায় আসবে এ অঞ্চলের ১০০০ হেক্টর জমি। এছাড়া নদীর বাম ও ডান তীরে হেডার ট্যাংকসহ বারিড পাইপ নেটওয়ার্ক নির্মাণের ফলে রাবার ড্রামের ভাটির কৃষকরাও পাবে সেচ সুবিধা। ফলে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্রামের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় ওই ইউনিয়নের মানুষের মাঝে এখন বইছে আনন্দের বন্যা। চলমান কাজের গতি অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বেলান নদী দিনাজপুরের একটি নদী। সর্পিলাকার প্রকৃতির নদীটির দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ৩৫ মিটার। নদীটি নীলফামারী জেলা হতে উৎপত্তি হয়ে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট ও কাচিনিয়াবাজার হয়ে চিরিরবন্দরের ভূষিবন্দর নামক স্থানে আত্রাই নদীতে গিয়ে মিলেছে। নীলফামারী সদরের গোড়গ্রাম ও খানসামার ভেড়ভেড়ি ইউনিয়নের বিলাঞ্চলের পানিই এ নদীর প্রধান পানির উৎস।
ষাটের দশকে শুষ্ক মৌসুমেও এ নদীতে ব্যাপকভাবে পানি প্রবাহিত হতো। আর এ নদীর পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে কৃষিকাজে ব্যবহার করে এলাকার কৃষকরা নানা রকম ফসল উৎপাদন করত। এছাড়া নদীতে পানির পর্যাপ্ত প্রবাহ অব্যাহত থাকায় প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপাদন হতো। তাই সারা বছর স্থানীয় মৎস্যজীবী পরিবারগুলো নদী থেকে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে খনন না করায় পলি পড়ে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে বেলান নদী। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পানিশূন্য থাকায় নদীতে মাছের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। নদীর পানি ব্যবহার করে কৃষিকাজও করতে পারছেন না এ অঞ্চলের কৃষকরা। সেচের পানির অভাবে এলাকার অধিকাংশ জমি পড়ে থাকে অনাবাদি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় বেলান নদীতে রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যামসহ পাম্প হাউজ, এপ্রোচ রোড, বেলান নদীর বাম ও ডান তীরে হেডার ট্যাংকসহ বারিড পাইপ নেটওয়ার্ক-১, নেটওয়ার্ক-২ নির্মাণ, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অফিস ঘর করা হবে। এছাড়া ৮ কিলোমিটার বেলান খাল, এক হাজার ৪৯০ মিটার মরা নদী ও ৭২৫ মিটার শাখা খাল খনন করা হবে। এটি নির্মাণে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ১৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে এ রাবার ড্যামটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলান নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশের মাটি কেটে সমান্তরাল করছেন। সেইসঙ্গে অন্যান্য কাজও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বেলান নদীর পানি সংরক্ষণ করে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে ব্যবহারের জন্য কাচিনিয়া বাজার বেলান খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়েছে। এর মোট সদস্য সংখ্যা ৬১৭ জন।
সমিতির সভাপতি ভাবকী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সদস্যদের পর্যায়ক্রমে হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, কৃষির উন্নয়নে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান জাইকা।
ভাবকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম তুহিন বলেন, রাবার ড্যাম হলে এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে নিশ্চিত। তবে কাচিনিয়া বাজার বেলান খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডে প্রকল্পটির সুবিধাভোগী অনেক কৃষক ও মৎস্যজীবীদের সদস্য করা হয়নি। কাজটি ঠিক হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান বলেন, রাবার ড্যামের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের মানুষের কৃষিক্ষেত্রের পাশাপাশি গবাদি পশুপালন, মাছ চাষের ফলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। এছাড়া রাবার ড্যামের ওপর সেতু নির্মাণের ফলে নদীর উভয় তীরের মানুষ বিশেষ করে বর্ষাকালে যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘব হবে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
Leave a Reply