ভোরে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে আমনের খেত, জানান দিচ্ছে ধান কাটার সময় হয়েছে। ধানের শীষে শিশির বিন্দুতে ঝিলমিল করছে উদীয়মান সূর্যের আলো। কৃষকরাও ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। রংপুরের প্রতিটি উপজেলায় এখন এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে দিনমজুরদেরও। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ফলন ভালো হলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে খুশি নন কৃষক।
উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। তবে কৃষি অফিস বলছে, এবার অল্প কিছু জমিতে পঁচারি ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ ছাড়া ফলন ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা তাদের।
রংপুরের বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ফলন ভালো হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তিত তারা। সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চাষাবাদে। শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। সরকার যে দাম দিচ্ছে, তাতে উৎপাদন খরচের হিসেব কষলে লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার ধানের কাঁচা খড় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা।
মিঠাপুকুর উপজেলার রানিপুকুর এলাকার ধানচাষি আয়নাল হক বলেন, তেল সারসহ সবকিছুর দাম বাড়ছে। সরকার ধানের দাম দিছে ২৮ টাকা আর চালের দাম ৪২ টাকা। এই দামে আমাদের মতো কৃষকের লাভ হবেনা, উল্টা লোকসান হবে।
এদিকে সরকার নির্ধারিত দাম বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন কৃষক নেতারা। তারা বলছেন, আমনের ফলন ভালো হওয়াতে ধান ঘিরে লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা। এ পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির সবদিক বিবেচনা করে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও চাষাবাদে উৎসাহ বাড়াতে সরকারকে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণে ভেবে দেখতে হবে।
রংপুর কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষক আসলে কতটুকু লাভের মুখ দেখবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের যে প্রক্রিয়া, তাতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ কারণে উৎপাদক বা কৃষকরা প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনিয়ম ও বাধা সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা বেশি উপকৃত হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ মৌসুমে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ বছর এক কেজি ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪২ টাকা। যদিও রংপুরে এখনো শুরু হয়নি এই কার্যক্রম।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবার কৃষকের জন্য সন্তোষজনক ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান-মাড়াই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট আবাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ধান কেটেছেন কৃষকরা। চলতি মাসেই ধান কাটার কাজ শেষ হবে।
এই আমন মৌসুমে রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলায় হাইব্রিড, উফসী ও স্থানীয় মিলে প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর আগের মৌসুমের (২০২০-২১) তুলনায় এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ভালো ফলন হয়েছে। ২০২০-২১ মৌসুমে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর, ২০১৯-২০ মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৫ হেক্টর, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর এবং ২০১৭-২৮ মৌসুমে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছিল।
Leave a Reply