ভোরের কুয়াশায় লতা-পাতা, ঘাস ও আমন ধানের ডগায় জমছে শিশির বিন্দু। গ্রামীণ এ জনপদ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। তাই খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতিতে গাছের শাখা-প্রশাখা ও আগাছা কেটে সাফ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা।
খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের মাথা ভালো করে পরিষ্কার করে সাদা অংশ কেটে রোদে শুকিয়ে আবারও কেটে নলি লাগিয়ে ছোট-বড় বাসন বেঁধে রস সংগ্রহ করা হয়। এ রস অনেকে হাট-বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রি করেন। আবার কেউ জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন।
দেখা যায়, জমির আইল, রাস্তার পাশ এমনকি পুকুর পাড়ে খেজুর গাছের ডাল কেটে পরিষ্কার করছেন গাছিরা। কোমরে রশি বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ ছেঁচে দিচ্ছেন। গাছিরা জানান, শুকানোর পর আবারও ছেঁচবেন। ১০ থেকে ১৫ দিন পরে নলি লাগাবেন। এরপর শুরু করবেন রস সংগ্রহ। খেজুর গাছ থেকে রস পাওয়ার এ প্রক্রিয়াকে আঞ্চলিকভাবে কাম দেওয়া বলে।
গাছি জামাল হোসেন বলেন, ‘এবার তিনি ২৫টি খেজুর গাছ কাম দিয়েছি। গাছগুলো নিজের। সব প্রস্তুতি শেষ। অপেক্ষা এখন রস সংগ্রহের।’
পেশায় শিক্ষক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এখন আর খাঁটি গুড় পাওয়া দুষ্কর। ফুলবাড়ী বাজারের গুড় ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় গুড়ের দামও অনেক বেশি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘উপজেলায় তিন হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। চলতি বছর ৫০ টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার গাছের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না বলে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বাড়ির আশপাশ, জমির আইল, পুকুরপাড় এবং সড়কের ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।’
Leave a Reply