মাহির খানঃ
লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে বুড়িমারীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি ১০০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্যের লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক। একটিমাত্র সড়কে প্রায় ৪ কিলোমিটার এর জায়গার ১৭ টি স্থানে খানাখন্দে ভরে গিয়ে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যার সাথে সংযোগ রয়েছে দেশের বৃহত্তর তৃতীয় বুড়িমারী স্থল বন্দর।
এতে প্রতিদিন তিন হাজারও বেশি বাস, ট্রাক,মাইক্রোবাস,সিএনজি, অটোরিকশা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সেই মহাসড়কটি ১৭টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিদিনই সড়কে দূর্ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন মালবাহী ট্রাক,বাস,মাইক্রোবাসসহ হাজারও হালকা যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
বিশেষ করে লালমনিরহাট -বুড়িমারী মহাসড়কের পাটগ্রাম বাইপাস মোড়,কলেজ মোড়,বাউরা বাজার, হাতীবান্ধার বড়খাতা বাজার,হাতীবান্ধা বাজার,হাতীবান্ধার তেল পাম্প,পারুলিয়া বাজার,কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারি,ভুল্ল্যারহাট,আদিতমারী উপজেলার পলাশী,আদিতমারী উপজেলা সদরের গ্রামীণ ব্যাংক মোড় থেকে বুড়িরবাজার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধসহ মহাসড়কের ১৭টি স্থানের চলাচলের একেবারেই অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই খানাখনদে পানি ভরে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন থেকে শুরু করে পথচারী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বিপদে পরতে হচ্ছে। এই স্থানগুলোতে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কেউ হারাচ্ছে প্রাণ কেউ বা দেহের অঙ্গ। এভাবেই চলছে প্রায় দুই বছর। ১৭ টি স্থানে মেরামত কাজ হচ্ছে হচ্ছে বলে আর হচ্ছে না।
এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অস্থায়ী তিনটি ট্রাক প্রতিদিন ভাঙ্গা রাস্তাটি মেরামত করেই চলেছেন। কিন্তু মেরামতের জায়গাগুলো স্থায়ী হচ্ছেনা।
ব্যবসায়ীরা জানান,জেলার প্রত্যেক হাট বাজারগুলোর সামনেই এই সড়কের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতন ব্যবসা করতে পারছেন না। বৃষ্টি হলে আর ও জরাজীর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয় মহাসড়কে। দীর্ঘদিন থেকে বেহাল দশায় থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেন না কোন ব্যবস্থা।
বাস ও ট্রাক শ্রমিকরা জানান, মহাসড়কটি ভালো থাকলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছাতে ৩ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। খুব সতর্কতার সঙ্গে মালবাহী ট্রাক নিয়ে কুড়িগ্রাম-রংপুর ঢাকা-সিরাজগঞ্জ যেতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই দুর্ঘটনার কবলে পরতে হয়।
মহা সড়কের বেহাল দশার কারণে পরিবহন শ্রমিক বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে মালামাল পরিবহন করতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
সরকারী আদিতমারী জিএস মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক জাহিদ ইমাম শান্ত বলেন, আদিতমারি শহরের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরে গেছে এতে শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার কবলে প্রতিদিনই পড়ছে। তিনি দ্রুত মহাসড়কটি সংস্কারের দাবী জানান।
এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরের হোন্ডা শোরুমের সামনে সড়কের অবস্হা এতোটাই খারাপ যে, একটু বৃষ্টি হলেই হাটুপানি জমে যায়। পানি জমে থাকার কারণে দূর্ঘনা বেশি হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার হোন্ডা শোরুম এর পরিচালক সোহেল চৌধুরী জানান,দীর্ঘদিন থেকে উপজেলা সদরের এই মহাসড়কের স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে শুরু হয় জলাবদ্ধতা পানি নিষ্কাশন এর কোন ব্যবস্থা নেই এতে দুর্ভোগে পড়েছে ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ড্রাম ট্রাক চালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, বুড়িমারী স্থল বন্দর থেকে প্রতিদিন রংপুর,সিরাজগঞ্জ-বগুড়া পাথর পরিবহন করি। মহাসড়কের কয়েকটি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক পারাপার করছি। স্থল বন্দর থেকে বিভিন্ন জায়গায় মালামাল পরিবহনের জন্য রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি করছি।
বড়খাতা দোয়ানি মোড় এলাকার ট্রাকচালক ইউনুস মিয়া বলেন, বুড়িমারী স্থল বন্দর যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগে এবং অধিক পরিমাণে তেল খরচ করতে হয়। তাই মালামাল পরিবহনে ট্রাক মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
বাস চালক শাহীন বলেন, মহাসড়কটির দুরাবস্থার কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে বাসের যাত্রীও কমে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে বাস যাত্রীরা চলাচল করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এছাড়া গন্তব্যে পৌঁছতে অতিরিক্ত সময়ও লাগছে। আমাদের আয়ও কমেছে। এতে বেশিভাগ যাত্রীরা ট্রেনে করে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিএনএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন বলেন,একদিকে ডলারের ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে মহাসড়কটির বেহাল দশার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যেও বেহাল দশা তৈরি হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য জোরদার করার জন্য একমাত্র মহাসড়কটি সংস্কার প্রয়োজন। সড়কের কারণে অনেক সময় স্থলবন্দরে ট্রাক সংকট দেখা দেয়। বেশি চার্জ দিয়ে ট্রাক ভাড়া করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।
এবিষয়ে লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, জেলার ১৭ টি স্থানের মহা সড়কের প্রায় ৪ কিলো রাস্তা সংস্কার কাজ চলমান। বর্তমানে পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা বাজারের কাজ চলমান রয়েছে পর্যায়ক্রমে বাকী স্থানের সংস্কারের কাজ হবে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফার্ম রয়েছে কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
অত্র এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাজের গতি কমে গেছে। আশা করি সড়কের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হবে। পাশাপাশি ঠিকাদার যাতে দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
Leave a Reply