অনলাইন ডেস্কঃ
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল মুম্বাই, কলকাতা, দিল্লিসহ দেশটির বিভিন্ন শহর ও প্রদেশ।কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেও শুক্রবার দিল্লির জামা মসজিদসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ সব স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়েরেরও খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, শুক্রবার প্রবল শীত উপেক্ষা করে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এ ছাড়া জামা মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।
এমন পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে টহল বাড়ায় পুলিশ।
পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে জামা মসজিদের সামনে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা অলকা লাম্বা ও দিল্লির সাবেক বিধায়ক শোয়েব ইকবাল।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে লাম্বা বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। কিন্তু আপনি এনআরসির জন্য মানুষকে লাইনে দাঁড় করাচ্ছেন। যেমনটা করেছিলেন নোট বাতিলের সময়।’
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের দমাতে শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয় জামা মসজিদের সামনে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি সংগঠন এ দিন মিছিলের ডাক দিয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ ভবন, সিলামপুর ও জাফরাবাদ।
সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই এ দিন শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমেছেন। উত্তরপ্রদেশ ভবনের সামনে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। তবে সেই এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ১৫ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে। ড্রোনের সাহায্যেও নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা মিছিলের চেষ্টা করলে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
এ দিকে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মীরা। এনডিটিভি জানিয়েছে, আজাদ ময়দানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে অভিনেতা ও সেলেব্রিটিরাও যোগ দিয়েছেন।
এ ছাড়া, আগস্ট ক্রান্তি ময়দানে নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে মিছিল বের করা হয় মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নেতৃত্বে। ওই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বীর সাভারকারের নাতি রণজিৎ সাভারকার। মিছিলে ভারতীয় পতাকার পাশাপাশি বীর সাভারকারের পোস্টারও ছিল। গত সপ্তাহে এই আগস্ট ক্রান্তি ময়দান থেকে প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হন।
নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সি ও জৈন শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সমালোচকদের আশঙ্কা এই আইন ও এনআরসির যৌথ প্রয়োগে উপযুক্ত নথি না থাকা মুসলিমদের এই দেশ থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হতে পারে।