সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে নিহত মিঠাপুকুরের নাজমুল মিয়া নামে সেই যুবকের সারা শরীর কাফনের কাপড় পরিহিত ছিল। এতে করে হতবাক হয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ঠিক কী কারণে তার শরীরে কাফনের কাপড় পরানো ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়।
বুধবার (১৮ মে) দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শ্যামল। এর আগে রাতে সাভার ট্রাফিক বিভাগের পুলিশের এস আই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
নিহত নাজমুল মিয়া রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে। সাভারে রাজফুলবাড়ীয়া সাকিপাড়ায় বড় ভাইয়ের সাথে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।
জানা যায়, সোমবার ঘটনার রাতে এস আই হেলাল উদ্দিন ছিনতাইকারীকে বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে আটক করেছিলেন সন্দেহভাজন সেই ছিনতাইকারীকে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো ভুক্তভোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘটনার স্পষ্ট সাক্ষী সাভজর পরিবহনের সেই বাসটিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে গণধোলাইয়ে নিহতের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
মামলার বাদী ট্রাফিক পুলিশের এস আই হেলাল উদ্দিন বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে গত সোমবার (১৬ মে) রাতে আমি দায়িত্ব পালন শেষে সাভারে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে রাত সোয়া ১০টার দিকে সাভার পরিবহনের একটি বাস ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। এ সময় যাত্রীদের চিৎকার শুনে পেছনে থাকা হানিফ বাসে উঠে একটু সামনে গিয়ে বাসটির গতিরোধ করি। বাস থামার সঙ্গে সঙ্গেই ছুরি হাতে ৩ জন বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে দেখি। ভেতরে গিয়ে দেখি নাজমুল পুরো শরীরে দুই ভাগে কাফনের কাপড় পরিহিত ও ছুরি হাতে যাত্রীদের জিম্মী করে আক্রমন করার চেষ্টা করছে। পরে তাকে ঝাপটে ধরলে আমার ওপর হামলার চেষ্টা করেন। ধস্তাধস্তি করে তাকে বাস থেকে নিচে নামিয়ে আনি।
এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। বাসে থাকা প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী যে যার মতো চলে যায়। এ সময় সাভার পরিবহনের বাসটিকে থামতে বললেও দ্রুত গতিতে চলে যায়। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে ছুরিসহ কাফনের কাপড় জব্দ করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুল মারা যান।
নিহতের বড় ভাই মঞ্জু মিয়া বলেন, আমার ভাই খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল। শ্রমদিয়ে অনেক কষ্টে চলতাম আমরা। অসৎপথে কোনো দিন হাঁটিনি। আমি ও নাজমুল একইসাথে গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। পরে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ভ্যানে করে বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা বিক্রি করত। ৮-৯ বছর ধরে এখানে বাস করি। আমার পাশের ঘরে নামজুল তার স্ত্রীসহ থাকত। গত ৩ দিন আগে তার বউকে নাজমুলের শ্বশুর এসে বাড়ি নিয়ে যায়। তাদের পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। বাড়ি গিয়ে তাদের দেওয়া ফার্ণিচার ফেরত নিতে এসেছিল নাজমুলের বউ। এর পরদিন রাত ৮টা থেকে নাজমুলের ফোন বন্ধ পাই আমরা। পরের দিন শুনি আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। তবে নাজমুল কোথাও যাচ্ছিল নাকি বাড়ি ফিরছিল এমন কিছুই জানতে পারিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এস আই শ্যামল বলেন, কাফনের কাপড় পরিহিতের বিষয়টি আমাদেরও অবাক করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, খুব এগ্রেসিভ চিন্তা ভাবনা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। তিনি গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে ফেরি করে খেলনা বিক্রি করতেন। তার বিষয়ে আমারা কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আশা করি দ্রুত অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করতে পারব।
Leave a Reply