রংপুরের মিঠাপুকুরে এক শিক্ষককে মারপিট করে বিদ্যালয় থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে জামাত সমর্থিত আরেক শিক্ষকের দাবি আইন অমান্য করে তাকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদবঞ্চিত করে সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। মারপিটের শিকার হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি শিক্ষকের নাম বাদল মিয়া। তিনি উপজেলার মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। অপরদিকে বরখাস্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের পদবঞ্চিত শিক্ষক হলেন মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর এবং কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। একদিকে মারপিট আরেকদিকে প্রধান শিক্ষকের পদবঞ্চিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৭ মে) বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা করেছেন।
গত সোমবার (১৬ই মে) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার কাফ্রিখাল ইউনিয়নের মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।
মারপিটের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়াকে উদ্ধার করতে গিয়ে একই বিদ্যালয়ের নুরুজ্জামান ও আব্দু্ল্লা নামে আরও দুজন শিক্ষক ও কর্মচারী আহত হয়েছেন।
অভিযোগ ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার মিয়ারহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় জয়নাল আবেদীন মাস্টারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা হয়। আদালতের রায়ে তিনি কারাগারে থাকার কারণে ওই সময় তার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে কামরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। কামরুল ইসলাম প্রায় ৩ বছর দায়িত্ব পালন করার পর একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাদল মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে অধ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার নিকট গত ০৮/০৬/২০২১ সালে সাময়িক বরখাস্ত থেকে অব্যাহতি ও বকেয়াসহ পূর্ণ বেতন চেয়ে একটি আবেদন করেন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন। এরপর মৌখিক আলোচনাসুত্রে সমস্যা নিরসনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া গত ১২ মে এডহক কমিটির সভা আহবান করেন। কিন্তু সভায় কমিটির সভাপতি ফুয়াদ মন্ডল অনুপস্থিত থাকার কারণে বিষয়টি অসমাপ্ত থেকে যায়। এরপর গত ১৬ মে সকালে আনুঃ ১১ টার দিকে বিদ্যালয়ে যান বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন। তিনি তার আবেদন ও মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট পিটিশন নং ৩৬৫৭/২০১৫ এর রায়ে বেসরকারি মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশী সাময়িক বরখাস্ত না রাখার নির্দেশনা উপস্থাপন করে প্রধান শিক্ষক পদে পূর্ণবহাল করার জোর দাবি জানান। তার দাবির মুখে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাকে নিয়ম মেনে দায়িত্ব বুঝে নিতে বলেন। এতে উভয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উপর চড়াও হয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেন জয়নাল আবেদীন ও তার সহযোগীরা। এতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বাদল মিয়া। এদিকে তথ্য সংগ্রহের জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভুক্তভোগী বাদল মিয়াকে তার বেডে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ২ ঘন্টা অপেক্ষা করার পর তিনি হাসপাতালে আসলে পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা জানান। তবে চিকিৎসার জন্য সকল সুযোগ সুবিধা হাসপাতালেই রয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাদল মিয়া বলেন,
জামাতের আমীর জয়নাল আবেদীন কাফ্রিখাল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর কোন নিয়মনীতি মানতে চান না। সে দাপট খাটিয়ে আমার হাতে ও পিঠে মেরেছে। আমি হাতে মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছি। আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তাদের অতর্কিত আক্রমণে আরও দুজন আহত হয়েছে। নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ধারদেনা করে বাড়ি করেছি যার প্রতিমাসে কিস্তি দেয়া লাগে। মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি কিভাবে নিয়োগ দেই? কমিটির লোকজন চাইলে আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।
বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, কাফ্রিখাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আন্তরিকতার সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দল করায় বিভিন্ন মামলা হওয়ার কারণে ২০১৪ সালে সাময়িক বরখাস্ত করেন তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে পূর্ণ বহালের জন্য আবেদনের সাথে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট পিটিশন সংযুক্ত করার পরও তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানি করছেন। গত দুই বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টালবাহানা করার কারণে আমি যোগদান করতে পারছি না। সেখানে মারপিটের ঘটনা ঘটেনি সামান্য হাতাহাতি হয়েছে। আমার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কারণে আমার বেতনের অর্ধেক অংশ, প্রায় ১০ লাখ টাকার বেশি রিফান্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটা মানুষ এভাবে কতদিন চলতে পারে। বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি ফুয়াদ মন্ডল বলেন,
ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিদ্যালয়ে যোগদান করতে চান কিন্তু কেন তাকে বরখাস্ত করা হলো এবং কোন মামলা চলমান আছে কিনা এ সংক্রান্ত বিষয়ে ডকুমেন্টস চাওয়া হলে তিনি তা না দিয়েই নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারপিট করেছেন। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে টাকা লেনদেনের বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট, যার কোন ভিত্তি নেই।
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply