নিউজ ডেস্কঃ
পত্রিকায় কী লিখল, তাতে ঘাবড়ে না গিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি সেইভাবেই চলি। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছি বলেই আজকে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ভয়ে ভয়ে থাকতাম- ও কী লিখল, ও কী বলল, ও কী করল, তাহলে কোন কাজ করতে পারতাম না। নিজের বিশ্বাস হারাতাম।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় পত্রিকা পড়ে আপনারা অনেকে ঘাবড়ান। এই পত্রিকা এই সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকা আছে তারা সব কিছুতে একদিন ভালো লিখলে পরের সাতদিন লিখবে খারাপ। এটা তাদের চরিত্র। আমি চিনি সবাইকে। হাইস্কুল থেকে তো রাজনীতি করি। সবাইকে আমার চেনা আছে। সব পরিবারকেও চেনা আছে। এটা তাদের চরিত্র। কাজেই ওই পত্রিকা দেখে ঘাবড়ানোর কোন দরকার নেই। আর পত্রিকা পড়েও সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নেব দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে। এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হওয়া নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে যারা সমালোচনা করেন, বক্তৃতায় তাদের পাল্টা সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তিনি।
কাজের ব্যস্ততার মাঝেও একদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে টক-শো দেখার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ দেখলাম ইদানীং একটা কথা খুব বেশি প্রচার করার চেষ্টা করছে। একটা হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তারা টাকার অঙ্ক দিয়ে দেখাতে চাচ্ছেন যে, এত টাকা খরচ করার দরকারটা কী ছিল।’
‘আমি শুধু এটুকুই বলব, আমরা যখন সরকার গঠন করে রেন্টে পাওয়ার প্লান্ট এনে কাজ শুরু করলাম, তখনও এরা বলছে- এটার দরকারটা কী ছিল। এতে নাকি ভীষণ দুর্নীতি হচ্ছে। আর আজকে আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, যেটা সব থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব, কোন পলিউশন নেই, বানাতে খরচ বেশি কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। আর তাছাড়া আমরা তো এটা একটি দেশের সঙ্গে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়েই এটা করেছি। সেখানে আমাদের টাকার অঙ্ক কম। আমরা টাকা পেয়েছি এবং সেটা আমাদের শোধ দিতে হবে ৫০ বছরে।’
রূপপুরের বিদ্যুতে অর্থনীতির ভিত্তি কতটা মজবুত হবে, তা সমালোচকরা চিন্তা করেন না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এর থেকে যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে, এটাও তারা ভাবেন না। কারণ তারা তো এখন বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। যখন ১০ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেতেন না, তখন হয়ত বিদ্যুতের চাহিদাটা তারা বুঝতেন।’
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই বিদ্যুতের জোরে ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলছে, আর এই বেসরকারি খাতে টেলিভিশন আমিই উন্মুক্ত করে দিয়েছি, সেখানে বসেই তারা সমালোচনা করে যাচ্ছেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিই, তখনও সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আজকে সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্ম নিয়েই কিন্তু তারা আমাদের সমালোচনা করে যাচ্ছেন।’
কিছু লোক সবসময় সমালোচনা করাকেই অভ্যাসে পরিণত করেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত ভালো কাজ করেন না কেন নিজেদেরটা তারা দেখে, নিজেদেরটা তারা বোঝে। কিন্তু জনগণের ভালোমন্দ বোঝে না।’
শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দেয়ায় দেশের অর্থনীতি সচল রয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬২ সালে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করার কথা থাকলেও পরে দুটোই পশ্চিম পাকিস্তানে করা হয়। এতে বরাবরের মতোই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছিল।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্যই ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। এর বিদ্যুৎটা যখন আসবে, সেটা তো আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। অর্থনীতি আরও সচল হবে, আরও চাঙ্গা হবে এবং এটাতো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কাজেই এটা নিয়ে এতে সমালোচনা কেন?’ সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ গেছে, সেটা তাদের পছন্দ না। তারাই খাবেন, ভালো থাকবেন আর আমার গরিব মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরবে। এটাই তারা চায়।’
পদ্মা সেতু এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যাতে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, সমস্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে, বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ করতে পারে, বিশ্বটাকে তাদের নিজের হাতের মুঠোয় আনতে পারে- আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিই।’
‘কাজেই যারা এভাবে সমালোচনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করেন, আমি তাদের বলব যে- তাদের সংযতভাবে কথা বলা উচিত। মানুষকে খামোখা, অযথা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা না করা ভালো।’
সরকারি কর্মকর্তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় আপনাদের অনেকের মুখেই শুনি- এই পত্রিকা লিখেছে। ওটা নিয়ে কখনও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওটা নিয়ে চিন্তাও করবেন না। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। সেটাই আমি চাই। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যেতে হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।সুত্রঃদৈনিক সংবাদ।
Leave a Reply