নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। তবে খোলা তেলে স্বস্তি ফিরছে না। আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে খোলা সরিষার তেলও।
বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও চাল, ডাল ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে দেশী মুরগি ও গরুর মাংসের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৯৮-২০০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৭৮৫-৭৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা দরে। এর সঙ্গে যোগ দিয়ে খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা।
মুলাটোল আমতলা বাজারের ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া জানান, গত কয়েকদিনের তুলনায় বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট কাটতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার কোম্পানি থেকে তেল সরবরাহ করা হয়েছে। এতে বোতলের গায়ে থাকা নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা তেল পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বজারে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।
প্রেস ক্লাব চত্বরে মেশিনে সরিষা ভেঙে তেল প্রস্তুতকারী আনিছ মিয়া জানান, একমাস আগেও প্রতিমণ সরিষা তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে কিনতাম। ঈদের পর থেকে সেই সরিষা চার হাজার থেকে চার হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আগে এক লিটার সরিষা ২৪০ টাকা করে বিক্রি করলেও এখন ২৫০-২৬০ টাকা লিটার বিক্রি করতে হচ্ছে।
সেখানে তেল কিনতে আসা নগরীর কেরানীপাড়ার ফুয়াদ হাসান জানান, প্রতিমাসে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল লাগতো। সরিষা দুই লিটারে মাস চলে যায়। দাম বাড়ার কারণে সরিষার তেল কিনতে শুরু করেছেন। এখন সেটারও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে উদয় চন্দ্র বর্মণ নামে এক ক্রেতা বলেন, আগে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১০০ টাকায় কিনতাম। এখন সেটা দিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। দাম বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি। এ কারণে খুব বিপদে আছি। সয়াবিন তেলের দাম কমানো না হলে আমাদের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে যাবে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে দেশি ও পাকিস্তানি লেয়ার মুরগির দাম। খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৫৫-১৬০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা এবং দেশী মুরগি ৩০-৪০ টাকা বেড়ে ৪৯০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানি লেয়ার ১০-২০ টাকা বেড়ে ২৬০-২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫০-৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস আগের মতোই ৮৫০-৯০০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সিটি বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আমিন হোসেন বলেন, ঈদ ঘিরে বাজারে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। সে অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি টমেটো ৫ টাকা বেড়ে ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ১০-২০ টাকা বেড়ে ৭০-৮০ টাকা, করলা ১৫-২০ টাকা কমে ৪০-৪৫ টাকা, চিকন বেগুন ৫-১০ টাকা কমে ৪৫-৫০ টাকা, গোল বেগুন ২০ টাকা কমে ৪৫-৫০ টাকা, শসা আগের মতোই ১৫-২০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, লেবু প্রতি হালি ২০-২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ১০ টাকা বেড়ে ৬০-৭০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচকলা হালি ২০-২৫ টাকা, বরবটি ৫-১০ টাকা কমে ২৫-৩০ টাকা, দুধকুষি ২০-২৫ টাকা, পটল ১০ টাকা কমে ২৫-৩০ টাকা, সজনে ৩৫-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০-৯০ টাকা, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩৫ টাকা, চাল কুমড়া আকার ভেদে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙে গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-১৫ টাকা কমে ২০-২৫ টাকা, কাঁকরোল ৪০-৪৫ টাকা, সবধরনের শাক ১০টাকা আঁটি এবং দেশি পেঁয়াজ ২৫-৩০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদা ৭০-৮০ টাকা, রসুন ১০ টাকা বেড়ে ৬০-৭০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির ডিমের হালি ৩-৪ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে ৩৭-৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে কার্ডিনাল আলু গত সপ্তাহের তুলনায় ১-২ টাকা বেড়ে ১৩-১৪ টাকা এবং শিল আলু ৩০-৩২ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া খোলা চিনি ৮০-৮৫ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ৮৫ টাকা, মসুর ডাল মাঝারি ১০০ টাকা, চিকন ১৩০ টাকা, আটা প্যাকেট ৪০ টাকা ও খোলা ৩৬-৩৮ টাকা এবং ময়দা ৫৫-৬০ টাকা প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দামে তেমন একটা হেরফের নেই। আগের মতোই স্বর্ণা (মোটা) ৪৬-৪৮ টাকা, বিআর ২৯-৫৮-৫৯ টাকা, বিআর-২৮-৫৮-৬০ টাকা, মিনিকেট ৬৮ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
Leave a Reply