নিউজ ডেস্কঃস্টেশন, বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের জটলা। স্টেশনে অপেক্ষা সকালের চিলাহাটি-খুলনাগামী আন্তনগর ট্রেন রূপসা ও পরপরই রকেট মেইল ধরার আয়োজন।
যারা ট্রেনে যেতে পারেনি তারা বাসটার্মিনালে দরদাম করছেন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য। তাঁরা সবাই শ্রমিক।
হাতে রয়েছে কাস্তে, বোঝা বাঁধার রশি। তাঁরা সবাই ছুটছেন দক্ষিণের জেলাগুলোতে।
ধান কাটতে তাঁরা যাচ্ছেন এসব পথে।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সাধারণত অলস সময় কাটান উত্তরাঞ্চলের কৃষি শ্রমিকেরা।
এ সময় মাঠে কাজ না থাকায় ধার দেনা করে চলতে হয় তাদের। এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দিনে দিনে বাড়ে ঋণের বোঝা। ইরি-বোরো ধান পাকতে এখনো ২০-২৫ দিন বাকি। কাজের সন্ধানে দক্ষিণের উদ্দেশে এখনই বাড়ি ছাড়ছেন উত্তরের এই দরিদ্র মানুষেরা।
কৃষি শ্রমিকের সংকট দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, তিলকপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় উত্তরবঙ্গের এই শ্রমিকেরাই ভরসা। এই কৃষি শ্রমিকেরা প্রতিবছরই ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময়টা ট্রেনে ও বাসে চেপে সেসব এলাকায় যান।
আবু তাহের নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা প্রতিবছর আগাম ধান কাটতে ১৫-১৬ জনের একটি দল জয়পুরহাটে যাই। সেখানেই কয়েকটি বাড়ির ধান কাটা-মাড়াই করে ফিরে আসি।
নীলফামারীসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর এবং রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুরেরা ভিড় করছেন রেলস্টেশনগুলোতে। এখন প্রতিদিন সকালেই এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
সৈয়দপুর স্টেশনে সোমবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কথা হয় শ্রমিকের আরেক দলনেতা উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জহদ্দি মামুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ ভালো নেই। সামনে আসছে ঈদ। সেই সঙ্গে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এনজিও’র ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তাই বাড়তি আয় করার জন্য আমরা সকলেই ধান কাটার জন্য বগুড়ার শান্তাহারে যাচ্ছি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে কথা হয় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ডাঙ্গারহাটের কৃষি শ্রমিক হেলাল উদ্দিনের (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ১২ জন শ্রমিকের একটি দল নিয়ে ধান কাটতে যাচ্ছি সান্তাহারে। ওই এলাকায় প্রতি বছর ধান কাটতে যায়। এজন্য এই এলাকার গৃহস্থদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকে। ধান পাকলেই তাঁরা ফোনে যোগাযোগ করেন।
এদিকে নতুন নিয়ম না জানার কারণে ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক শ্রমিককে। এর মধ্যে রয়েছেন তারাগঞ্জের আলমপুর ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন ও তাঁর দলবল। তারা জানান, টিকিট কাটতে আইডি কার্ড লাগে এটা জানতেন না। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠবেন না। তারা বলেন, মোবাইলে গৃহস্থকে জানিয়ে দিয়েছি, একদিন পর আমরা আসতেছি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শওকত আলী জানান, দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য কৃষি শ্রমিকদের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম রেলপথ। তবে সৈয়দপুর ও চিলাহাটি স্টেশনে আইডি কার্ড ছাড়া যাত্রীকে টিকিট দিতে পারবে না স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অনেকে ট্রেনের টিকিট না পেয়ে দলগতভাবে ট্রাক-পিকআপ ভাড়া নিয়ে সড়কপথে কাছের জেলা ও উপজেলাগুলোতে চলে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply