হজরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয়ের ব্যাপারে সবার চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী কারিম (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন। জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।’ -সহিহ বোখারি : ১৯০২
বর্ণিত হাদিসে দুইটি বিষয় ফুটে উঠেছে। ক. রমজান মাসে রাসুল (সা.)-এর বেশি দান। খ. এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত। এর কারণ হলো, রমজান মাসে সৎকাজ করলে অন্য মাসের তুলনায় অনেকগুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা রমজান মাসের রয়েছে নিজস্ব সম্মান ও মর্যাদা; যা অন্য মাসের নেই। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম-সন্তানের প্রতিটি কাজের সওয়াব দশ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, তবে রোজা ছাড়া। কেননা তা শুধু আমার জন্য এবং আমিই তার পুরস্কার দেব।’ -ইবনে মাজাহ : ৩৮২৩
রমজান মাসে প্রতিটি আমলের সওয়াব যেহেতু সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, তাই এ মাসে এক টাকা দান করলে সাতশ’ টাকার সওয়াব আশা করা যায়। এজন্য রমজানকে দানের মাস হিসেবে গ্রহণ করতে রাসুলের (সা.) নির্দেশনা রয়েছে। নবী কারিম (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন রমজান মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে। হাদিসেও রমজান মাসকে ‘সহানুভূতির মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পবিত্র রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হয়।
তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। ইসলাম যেমন দানশীলতাকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি পরনির্ভরশীল হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। রমজানে রোজাদাররা রোজা পালনের মাধ্যমে দানশীল ও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
দান-সদাকা করলে সম্পদ কমে না। হজরত আবু কাবশা আল আনমারি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি শুনেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘সদকা করলে কোনো মানুষের সম্পদ কমে না।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩২৫
দান সম্পদ বৃদ্ধি করে। দানকারীর জন্য ফেরেশতারা দোয়া করে। তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেওয়া হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের সব বিষয় সহজ করে দেবেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬৯৯
গোপন ও প্রকাশ্যে যে কোনোভাবে দান করা যায়। সব দানেই সওয়াব রয়েছে। তবে গোপনে দান করার ফজিলত বেশি। গোপনে দানকারী কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে। দান-সদকা গোনাহ মাফ করে ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায়। তাই ইসলামি স্কলাররা পরামর্শ দেন, ‘রমজানে জাকাত ফরজ না হলেও যথাসম্ভব দান-সদকার আমল করা। যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা জাকাত আদায়ের পর অতিরিক্ত সদকা করতে পারেন। সদকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন। বিপদাপদ দূর করে দেন। মানুষের হায়াতে বরকত হয়, অপমৃত্যু কমে ও অহঙ্কার-অহমিকা থেকে মুক্ত থাকা যায়।’ -আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৬৫
Leave a Reply