কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে বিএসএফের বাধায় বন্ধ হয়ে গেল ঐতিহাসিক দুই বাংলার এক মসজিদের নির্মাণ কাজ। কিছু দিন আগে নতুনভাবে নির্মাণের কাজ শুরু করা করেছিল মসজিদ কমিটি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের দোহাই দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ মসজিদটির নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) জানিয়েছে, মসজিদটির কাজ যাতে আবার শুরু করা যায় সে লক্ষে তারা কাজ করছে।
১৮২০ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সীমানার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৭৮-এর সাব পিলার ৯ এসের পাশে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এর উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম এবং দক্ষিণে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রাম। দুই দেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত হয় এই মসজিদটি। মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ’ নামে। যেটি এখন দুই বাংলার এক মসজিদ নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালে ভারত বাংলা বিভক্ত হলেও বিভক্ত হননি মসজিদে নামাজ পড়া মুসল্লিরা দুই দেশের মুসল্লিদের সেতু বন্ধন রূপে কালের সাক্ষি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদটি।
জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই মসজিদটির ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী গত এপ্রিল মাসে সেখানে মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সরকারি-বেসরকারি আর্থিক অনুদান ও দু-দেশের মুসল্লিদের সহযোগিতায় ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্তের মসজিদটির নতুন ভবনের কিছু কাজ শুরু করা হয় এবং কিছু কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৫ মে সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডের ১৫০ গজের ভেতরে পাকা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকার অজুহাত দেখিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজে বাধা দেয় বিএসএফ। এতে বন্ধ হয়ে যায় দুই শতাব্দী ধরে দুই বাংলার মানুষের সেতুবন্ধনের অনন্য প্রতীক এই মসজিদটির কাজ।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কফিলুর রহমান বলেন, দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে আইনি জটিলতা কাটিয়ে ঐতিহাসিক এই মসজিদটির একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সৃদৃষ্টি কামনা করছি।
পাথরডুবি ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরফান আলী বলেন, গত ২১ মে (শুক্রবার) কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন মসজিদটি পরিদর্শনে আসলে আমরা এমপি মহোদয়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে মসজিদ নির্মাণে বিএসএফ কর্তৃক বাধার বিষয়টি জানিয়েছি। তারা দ্রুত বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম ২২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, ‘ওই সীমান্তের জিরো লাইনে ঐতিহ্যবাহী পুরাতন একটি মসজিদ রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে দুদেশের মুসলমানরা একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করে আসছেন। মসজিদটির নতুন ভবন নির্মাণে বিএসএফ আপত্তি জানিয়েছে। আমরা বিএসএফের সঙ্গে কনভেন্স করে একটি উপায় বের করার চেষ্টা করছি- যাতে বিএসএফ ঐতিহাসিক এই মসজিদটির নির্মাণ কাজে আর যেন বাধা না দেয় সে লক্ষে আমরা কাজ করছি।
Leave a Reply