আমি হিমালয় দেখিনি
শুনেছি সেখানে নাকি এভারেস্ট নামের
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ
দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে!
কিন্তু আমি দেখেছি আমার বাবাকে
যিনি তার অক্ষম সন্তানদের
বিশাল বটবৃক্ষের মত মাথা উঁচু করে
দাঁড়িয়ে থেকে ছায়া দেন অবিরাম।
বাবা মানেই সীমাহীন এক বটবৃক্ষের ছায়া- সন্তানের কাছে এক পরম নির্ভরতার প্রতীক। বাবা মানে মাথার উপর শীতল কোমল ছায়া। বাবা মানে ডালপালা মেলা এক বিশাল বটবৃক্ষ। ধুম বৃষ্টিতে বা তীব্র জ্বালাময় রোদে সন্তানের কাছে শান্তিদায়ক ছাতা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে পথ দেখানো আলো।পৃথিবীতে সুন্দরতম শব্দগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হল বাবা। বাবা হল অদ্বিতীয় আলো। যার আলোয় আলোকিত হয় আমাদের সারা জীবনের পথ চলা।
বাবা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নির্ভরতা রয়েছে এক বিশালতা। পাহাড় সমান বিষন্নতাকে শুষে নেয় নিমিষেই। মানুষের জীবন আকাশের রংয়ের মত। যে কোন সময় জীবনের রং বদলে যেতে পারে। হারিয়ে যেতে পারে জীবনের গতি। থেমে যেতে পারে জীবনের পথ চলা। যাদের বাবা প্রয়াত তাঁরাই শুধু অনুভব করতে পারবে বাবার স্নেহ কতটা শক্তিশালী।
এই ভালবাসা জগতের সকল কিছুর তুলনার উর্দ্ধে অথচ এই আবেগের কথাগুলো কখনোই যেন বাবাকে বলা হয় না। কিন্তু রক্তের প্রতিটি কণিকায় ঠিকই এই মানুষটার জন্য ভালোবাসার ঝংকার তৈরি হয়। বলতে মন চায়, তুমি শুধুমাত্র আমার বাবা নও, বেহেশত থেকে পাঠানো এক ফেরেশতা। বাবাকে ভালোবাসার জন্য দিনক্ষণ লাগে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবার মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তা’আলা সন্তুষ্ট হন; আর বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যখন কোনো সন্তান বাবা-মার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে তাকান; আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টি বিনিময়ে সন্তানের আমলনামায় আল্লাহ তাআলা একটি কবুল হজের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। এমনকি সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনবি বলেন, কেউ যদি একশত বার তাকায়, তার বিনিময়ে একশত কবুল হজের সাওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে। (সুবহানাল্লাহ)
আপনাদের কাছে আমার বাবা হয়তো একজন সংসদ সদস্য, একজন মন্ত্রী। কিন্তু তিনি আমার দেখা শ্রেষ্ঠ মানুষদের মধ্যে একজন। সারাটা জীবন অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও পরিশ্রমের সাথে জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি। খুব কষ্ট করে মানুষ করেছেন আমাদের। সেই প্রথম আমার অক্ষর দেখা। ভালো করে বুঝিও না অথচ কি এক আনন্দে, বিস্ময়ে আমি সেগুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছি। এরকম আরো কত বিস্ময়, কত অজানাকে প্রথম জেনেছি বাবার হাত ধরে! তিনিই প্রথম শিখিয়েছেন, “বড় মানুষ না ভালো মনের মানুষ হওয়াটাই সত্যিকারের স্বার্থকতা জীবনে।”
আমি নই আমার কাজ আমায় বাচিয়ে রাখবে। তাই কাজ করি কষ্ট করি তাই এ আনন্দ পাই । অনেক কষ্টের পর যখন নতুন কিছু সৃষ্টি হয় মানুষের জন্য,মানবতার জন্য তখন তার এই আনন্দ অনুভব করা যায় বলা যায় না ।
বলতে বাঁধা নেই এমন একজন মানুষের সন্তান আমি সৃষ্টির আনন্দ যার নিরন্তন।
আমার বাবা চিরকালই অপ্রকাশিত একজন মানুষ! মাঝে মাঝে মনে হয় ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা- এইসব অনুভূতিগুলো আমার বাবা খুব যেন যত্ন করেই চাপা দিয়ে রেখেছেন। প্রকাশিত হতে দেন নি! আর এতই স্বতঃস্ফুর্ত সেই অপ্রকাশ, সেটাকেই স্বতঃসিদ্ধ বলে জেনেছি। জীবনে যাই ঘটে, বাবাকে পাশে পাই সব সময়- দুঃখে-সুখে-বিপদে-আনন্দে। এই অনুভূতিটাই আমাকে একটা নিরাপত্তা আর নির্ভরতার বোধ দেয়। দেয় আত্মবিশ্বাস।
আমার বাবা তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ- একজন মুক্তিযোদ্ধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নিজ পিতা সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদের রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাবা ছাত্রজীবনেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা নির্বিশেষে মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিত্বের নাম নুরুজ্জামান আহমেদ। সন্তান হিসেবে এটা আমার জন্যও গৌরবের বিষয়।
১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে দু’বার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালের ১৯ জুন আমার বাবাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও একই বছরের ২১ জুন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার দেয়া হয়।এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ৭ জানুয়ারি আবারও সরকারের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন ।
তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে বর্তমান মেয়াদেও আমার বাবা মন্ত্রণালয়ে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
পেশায় রাজনীতিবিদ হওয়ার কারণে আমি দেখেছি, এই মানুষটা তার আসনের মানুষের জন্য এবং দেশের মঙ্গলের জন্য কীভাবে কাজ করে চলেছেন। ব্যক্তি জীবনে কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে দেখিনি কখনো।
তাই আপনাদের কাছে একান্ত নিবেদন, আমার বাবার জন্য প্রাণভরে দোয়া করবেন। সেইসঙ্গে আমি যেন তার সুযোগ্য সন্তান হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে পারি এবং তার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারি, সেজন্য আমাকেও দোয়া করবেন।
সর্বশেষ বাবার উদ্দেশ্যে আরেকটু কথা-
যখন আমার রোদ লেগেছে, ছাতা ধরেছ তুমি আমার মাথায়।
যখন কেউ আঘাত হেনেছে, ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছ তুমি আমার সামনে।
যখন আমি একা হয়ে গেছি, তুমিই আমার হাত ধরেছ।
মাঝ সমুদ্রে দক্ষ নাবিকের মতো আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছ তুমি।
বাবাকে নিয়ে কোন উপমা পৃথীবিতে আজও সৃষ্টি হয়নি। তামাম দুনিয়ার যত শব্দ আছে তা সংযুক্ত করলেও বাবার গুনগান শেষ হবে না।
বাবা শাসনে কঠোর, ভালোবাসায় কোমল, স্নেহে উদার, ত্যাগে অগ্রগামী।
তোমায় জানাই শতকোটি সালাম। ভালো থেকো বাবা।
জন্মদিনে তোমার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা। শুভ জন্মদিন বাবা।
মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি-
‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’
Leave a Reply