1. rkarimlalmonirhat@gmail.com : Rezaul Karim Manik : Rezaul Karim Manik
  2. maniklalrangpur@gmail.com : রংপুর সংবাদ : রংপুর সংবাদ
পড়েছি মোগলের হাতে... - রংপুর সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

পড়েছি মোগলের হাতে…

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৬৬ জন নিউজটি পড়েছেন

ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন

সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্টালিন বলেছিলেন, ‘দেশের জনগণের জন্য এটা জানাটাই যথেষ্ট যে দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যারা ভোট দেয় তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় না। যারা ভোট গণনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে তারাই সিদ্ধান্ত নেয় ফলাফল কী হবে।’ ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ফের শুরু হয়েছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া। প্রথম দিনে সর্বাধিক সুবিধাভোগী বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আটজনের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছে ‘নিশিরাতের নির্বাচন’ উদ্ভাবক নূরুল হুদা কমিশন। ২০১২ সালের ঠিক এই সময়ই রকিবউদ্দীন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৭ সালে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আমাদের অহংকার, গৌরব ও ভাষার জন্য আত্মত্যাগের মাস ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয়েছিল স্বাধীনতা উত্তর এ যাবৎকালের সর্বাধিক বিতর্কিত নূরুল হুদা কমিশন, যা জাতির ললাটে কলঙ্কের তিলক হয়ে আছে।

বরাবরের মতো এবারও নিবন্ধিত ৩৯টি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলাপ-আলোচনা করার কথা। গত দুবারের সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। যদিও তিনি কমিটির প্রধান থাকাকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন এবং পরে প্রধান বিচারপতি হন কিন্তু তিনি মাননীয় বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদের বিধানটি ও ১১৮ (১) নির্বাচন কমিশন গঠনের আইনটি বিগত ৫০ বছর যাবৎ লঙ্ঘিত হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি দেশের কোনো সচেতন নাগরিক জনস্বার্থে এ বিষয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হননি কিংবা কোনো বিচারপতির সুয়োমোটো রুলের নজির আমরা দেখিনি। অথচ সার্চ কমিটি গঠনের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া পাশের দেশ নেপাল ও পাকিস্তানে রয়েছে।

নেপালের শাসনতন্ত্রে ২৪৫ থেকে ২৪৭ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষমতা ও প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ অন্যদের সমন্বয়ে গঠিত সাংবিধানিক কাউন্সিল, যাকে সুপারিশ করবেন তার সামাজিক মর্যাদা, নৈতিক চরিত্র, ভোটারদের ধারণা, অতীতের কার্যক্রম বিবেচনায় এনে নামগুলো সংসদীয় কমিটিতে শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। 

পাকিস্তানে শাসনতন্ত্রের ২১৩ অনুচ্ছেদের ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতিই নিয়োগ দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক আলোচনার পর তিনজনের নাম নির্ধারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মতের অমিল হলে তাদের পছন্দনীয় নামের তালিকা পৃথকভাবে পার্লামেন্টারি কমিটির কাছে উপস্থাপন করেন। কমিটি তিনটি নামের মধ্যে একটি সুপারিশ করে।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের দাবিদার ভারত, বিগত ৭৫ বছর ধরে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় গৌরবান্বিত। তাদের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন ও আস্থাশীল, সাংবিধানিক ক্ষমতার ভারসাম্য কঠোর। এ ক্ষেত্রে পাশের দেশের সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই। আমাদের দেশে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশানের মতো প্রফেশনাল আমলা নেই। বাংলাদেশের আমলারা সাধারণত সরকারের আজ্ঞাবহ।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো হয়। সংসদীয় শাসন পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসন পদ্ধতি চালু এবং বহুদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে একদলীয় রাজনীতি প্রবর্তন করাই ছিল এ সংশোধনের মূল বিষয়। অথচ সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্র হবে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, স্বাধীনতার নিশ্চয়তা, মানবসত্তার নিশ্চয়তা, মানবিক মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। পরবর্তীতে ১৭ বছর পর দেশে দ্বাদশ সংশোধনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদীয় সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ও উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়।

বিশ্বমোড়ল মার্কিনিরা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাত সমুদ্র পাড়ি দিতে পারে কিন্তু নিজ দেশের নাগরিকরা রাস্তা পার হয়ে কেন্দ্রে ভোট দিতে যায় না। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন করোনাকালে মহামারিতে গণতান্ত্রিক এজেন্ডা নিয়ে ভার্চুয়াল সম্মেলনে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে আলোচনায় ডেকেছেন। সেখানে বাংলাদেশের ডাক মেলেনি। যদিও গণতন্ত্রের সূচকে ভারত ৫৩, শ্রীলঙ্কা ৬৮, বাংলাদেশ ৭৬, ভুটান ৮৪, নেপাল ৯২ ও পাকিস্তান ১০৫। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে সূচকে নেপাল ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের পরে হয়েও আমন্ত্রণ পেল কীভাবে! অবশ্য মার্কিনিরা আগেই শর্ত সাপেক্ষে ঘোষণা দিয়েছিল, যেসব দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও দুর্নীতির সূচকে অবস্থান খারাপ সেসব দেশের এ সম্মেলনে যোগদানের সুযোগ নেই। দি ইকোনমিস্টের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৬তম বা হাইব্রিড গণতন্ত্রের দেশ, এর অর্থ রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন ও কর্তৃত্ববাদী শাসন। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দুর্নীতি ও দমন-নিপীড়নের সামগ্রিক অবস্থান। ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচক-২০২১মতে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ। সুইডেনভিত্তিক ভ্যারিয়াস ডেমোক্র্যাসি ইনস্টিটিউটের গণতন্ত্রের সূচক-২০২১মতে বিশ্বের ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫৪তম, স্কোর ০.১। বাংলাদেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে ‘নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র’ বিভাগে রাখা হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২১মতে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫২তম। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এসবের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।

ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সমাজের বুনিয়াদি ব্যক্তিরা অংশ নেন। প্রান্তিক জনগণ মনে করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনই গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত। কিন্তু বাংলাদেশের অধুনা রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র ও দলীয় আধিপত্যবাদ বিস্তারের বীজ বপন করা হয় প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে। দলীয়ভাবে যিনি নৌকা প্রতীক পান তার বিপরীতে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতিযোগিতা। একপেশি নির্বাচন, দলীয় প্রভাব বিস্তারে এক অভিনব পদ্ধতি। সাধারণ ভোটারকে পরোক্ষভাবে হয় নৌকায় ভোট দিতে হবে, না হয় আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। অর্থাৎ নৌকা বনাম নৌকা। বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার নয়। অপকৌশলের বেড়াজালে সাধারণ মানুষের মধ্যে একদলীয় কমিউনিস্ট কায়দায় আধিপত্যবাদ বিস্তার করা। একই ছকে দ্বিতীয় ধাপে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে সেমিফাইনাল খেলা ও তৃতীয় ধাপে জাতীয় নির্বাচন অর্থাৎ ফাইনাল খেলা। ২০১২ ও ২০১৭ সালের সার্চ কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তীর বিজয়ের মাসে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে, দন্তবিহীন বাবুরাম সাপুরে খোঁজা।

রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রথম প্রহরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টিকে। স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক- আন্দোলনে তিন জোটের রূপরেখা হয়েছিল আওয়ামী লীগসহ আট দল, বিএনপিসহ সাত দল ও বামপন্থি পাঁচ দল নিয়ে। অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন হয়েছিল ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। তিন জোটের সমন্বয়ে, জাতির প্রয়োজনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ডকট্রিন অব নেসিসিটির কথা শুনেছিলাম। গণঅভ্যুত্থানে এইচ এম এরশাদের পতনের পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন ও পরিশেষে প্রধান বিচারপতির আসনে ফের প্রত্যাবর্তন করেছিলেন ১৯৯১ সালের ১০ আগস্ট একাদশ সংশোধনের মাধ্যমে। শুরু হলো গণতন্ত্রের যাত্রা। জামায়াতের আবিষ্কার, আওয়ামী লীগ দাবিদার ও জাতীয় পার্টি শরিকদার হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনের ফসল সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়েছিল ১৩তম সংশোধনের মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের। পরিতাপের বিষয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপস্থিতিতে আাওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলো কিন্তু সংবিধান সংশোধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায়নি। ২০০৭ সালে কথিত সেনাসমর্থিত ১/১১ সরকারের সময় বিকল্প পন্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের ধারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হলো। শুরু হলো ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকে থাকার নতুন পদ্ধতি ডিজিটাল ইলেকশন।

ইতিহাস বলে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠীর সময় আওয়ামী লীগ ১৬৭ আসনে জয়ী হয়েও ক্ষমতার মসনদে বসতে পারেনি। গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতা-উত্তর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৯৭৩ সালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জয়ী হয়। একই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীনরা ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বিজয়ী হয়। দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছে, এবারের সার্চ কমিটি গঠনে ২০১২ ও ২০১৭ সালের কমিটি প্রণেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা হচ্ছে। তাহলে কোনো অবস্থায় বলা যাবে না ক্ষমতাসীনরা জয়ী হবে না। কমিশনের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ভর করছে সরকারের পছন্দের ওপর। তাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের ইচ্ছামতো নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। তাহলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমাদের আলোচনায় গিয়ে রাবার স্ট্যাম্প হয়ে লাভ কী? সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্যসব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। সে ক্ষেত্রে দলীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপিকে ছাড় দেবে, এটি বিগত দিনের পরপর দুটি কমিশন দেখলে কি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়? সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বসার অর্থ হলো পাতানো খেলায় অংশ নেওয়া। তা ছাড়া সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। তাহলে কমিশনের ব্যর্থতার কারণ কী?

ইতিমধ্যে হুদা কমিশন গুরুতর আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসদাচরণে লিপ্ত থাকায় সুশীলসমাজের নেতৃত্বদানকারী ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন। বিগত নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কেবল নির্বাচন কমিশনের দ্বারা এককভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা অলীক কল্পনা মাত্র। যদিও বিগত ৫০ বছরেও সংবিধানের ১১৮(১) অনুযায়ী ‘কোন আইনের বিধানবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন’ তাহার জন্য নতুন আইন প্রণীত হলেও শুধু নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয়, যদি সরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ না থাকে।

তা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচন থেকে আমরা যা শিখি তা হলো আগের নির্বাচন থেকে কিছুই শিখিনি। যেহেতু সময়ের স্বল্পতা সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করে সুশীলসমাজ ও রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে একটি কাউন্সিল গঠন করে এ পালায় আইন প্রণয়নের আগেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

আমাদের নিজস্ব অবস্থা বিবেচনায় ব্যবস্থা নিতে হবে। সব দল ও নাগরিকসমাজের মিলিত প্রচেষ্টায় একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আনতে হবে। সদিচ্ছা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যাত্রায় সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সরকারকে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ দিতে হবে। ইতিহাস কখনো নির্দিষ্ট কাল বা সময়ের জন্য থেমে থাকে না। তাই রাষ্ট্রপতিকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর শপথবাক্যের চুক্তিনামার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুসংহত রাখার প্রয়াস থাকতে হবে। ‘তারাই বোধসম্পন্ন লোক যারা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।’ [সুরা রাদ আয়াত ২০]। তবে ২০১২ ও ২০১৭ সালের গঠিত সার্চ কমিটির প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয়, যিনি সার্চ কমিটির কর্তা তিনি নন বরং মোগলই সিদ্ধান্ত নেয় ফলাফল কী হবে। ‘দেশের জনগণের জন্য এটা জানাটাই যথেষ্ট যে দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যারা ভোট দেয় তারা কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় না।’ পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে তার সাথে…।

লেখক : সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারম্যান, ইআরআই।

 

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | রংপুর সংবাদ.কম
Theme Customization By NewsSun