রাস্তায় কড়াকড়ি আর সারাদেশে যানবাহন বন্ধ থাকায় পরও বগুড়া থেকে লাশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা ফিরেছে মানুষ। শহরতলীতে মহাসড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবসা এখন রমরমা। যাত্রী প্রতি হাজার থেকে ১৫’শ টাকা আদায় করছে তারা। অনেক সময় আবার পুলিশি ঝামেলা এড়াতে একজনকে রোগী সাজিয়ে বাকিদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দেয়া হচ্ছে। একই সাথে যোগাড় করে দেয়া হচ্ছে রোগীর বানানোর ভূয়া সার্টিফিকেটও।
বগুড়ার শেরপুরে হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর বানিউল আনাম জানান, ‘আগের চেয়ে এখন রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল বেড়ে গেছে। আর আত্মীয়-স্বজন পরিচয়ে যাত্রীও থাকে ঠাসা। রোগী একজন কিন্তু তার সঙ্গে গাড়িতে থাকেন ১০ জন। আমাদের সন্দেহ হলে থামাই। কখনো কখনো কাগজপত্রও চেক করি। রোগীর কাগজপত্র না থাকলে অ্যাম্বুলেন্স যেখান থেকে আসে সেদিকে ঘুরিয়ে দিই।’ তিনি স্বীকার করেন যে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মহাসড়কে অনেক যাত্রীবাহী অ্যাম্বুলেন্স চলছে।
বগুড়ার সহকারি পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফয়সাল আহম্মেদ জানান, অনেকেই রোগী সেজে পরিবার পরিজন বা আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। এজন্য শহরের বাইপাস মোড় গুলোতে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে বগুড়া বনানী মোড়ে গিয়ে দেখা গেলো সারিসারি অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী তোলার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথমে দেখে যে কেউ এ স্থানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয়েছে ভেবে ভূল করবে। আসলে এরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। দেখা গেলো শফিকুল নামের একজন যাত্রী ঢাকায় যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকের সাথে দরদাম করছেন। চালকের নাম মিরাজ, মাঝ বয়সি। তার এক কথা জন প্রতি ১২’শ দিতে হবে। আর কোন লাগেজ থাকা যাবে না। যাত্রী হতে চাওয়া শফিকুল ১ হাজার দিতে দরদাম করছেন।
এর পেছনে সাইরেন বাজিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে থামলো। সেখানে ওঠার জন্য দৌড়ে গেলেন মিনারা বেগম এবং তার স্বামী মনির হোসেন। তারা দুইজনই ঢাকার একটি বেসরকারি কম্পানীতে কাজ করেন। সাথে বড় ব্যাগ থাকায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক তাদের নিতে রাজি হলেন না। বেশি টাকা দিতে চাওয়ার পরেও চালক আব্দুল গফুর বলে দিলো ব্যাগ নিলে ট্রাকে যান। অ্যাম্বুলেন্সে ব্যাগ ছাড়া যেতে হবে। অগত্যা এই দম্পতি দৌড়ালো পাশের দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের দিকে। সেখানেও জনপ্রতি ১ হাজার টাকা আর ব্যাগের জন্য ৫’শ টাকা দিতে হলো তাদের।
পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করা হয় বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিকের সঙ্গে। তার গাড়ি তার গাড়ি শহরের মধ্যে বেশি চলে। ঢাকায় রিজার্ভে যাবার কথা শুনে অনেক প্রশ্নের পর রাজি হলেন। কিন্তু ভাড়া দাবি করলেন ১৪ হাজার টাকা। একই সাথে জানিয়ে দিলেন তার গাড়িটি নন এসি। আর পথের সব খরচ ভাড়াকারীকে প্রদান করতে হবে। পুলিশি ঝামেলা হলে বলতে হবে এটা রোগীর গাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু বগুড়া শহরে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক। এসব অ্যাম্বুলেন্সের ৯০ ভাগই এখন যাত্রী বহন করছে। জরুরী প্রয়োজনে অসুস্থ রোগীকে বহনের জন্য শহরে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।
কথা হয় অ্যাম্বুলেন্স চালক আমির হামজার সাথে। তিনি বললেন রাস্তায় কড়াকড়ি থাকায় অনেক সময় পুলিশকে ম্যানেজ করতে হয়। এছাড়া ব্যবসা মোটামুটি ভাল। তবে রাস্তায় জ্যাম থাকার কারনে যেতে এবং ফিরে আসতে সময় লাগে বেশি। এটা উসুল করতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। তবে সবগুলো অ্যাম্বুলেন্স এলপিজি গ্যাসে চলার কারনে লাভ অনেক বেশি। এজন্য মালিকরাও যাত্রী পরিবহনে আগ্রহী বেশি।
আমিনুল নামের আরো একজন চালক বলেন, আপনি যদি পুরো অ্যাম্বুলেন্সই নিয়ে যেতে চান তাহলে একজনকে রোগী সাজাতে হবে। কোনো একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে একজনের পায়ে বা মাথায় ব্যান্ডেজ করে সঙ্গে চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে নেব। তাহলে পথে কোন সমস্যা নাই।
বগুড়া প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির নেতা আসাদুল্লাহ প্রামানিক বলেন, আমরা এরকম যাত্রী বহনের অভিযোগ প্রতিদিনই পাই। যাত্রী নেয়ার কোনো বিধান নেই এটাও মানি। কিন্তু করোনার কারনে ভাড়া কমে যাওয়ায় এখন কেউ সমিতির কথা শোনে না। কোন গাড়ি ধরা পড়লে আমরা পুলিশির কাছে কোন তদবিরও করছি না। সবাইকে বলে দিয়েছি নিজের রিক্সে গাড়ি চালাতে হবে।
Leave a Reply