প্রথমবারের মতো পশ্চাদপসরণকারী বা পিছিয়ে পড়া গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নাম উঠলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসট্যান্স (আইআইডিইএ) এই তালিকা তৈরি করেছে।
বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বলছে যে, ২০১৯ সাল থেকে গণতন্ত্রের নানা সূচকে দৃশ্যমান পতনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো পশ্চাদপসরণকারী বা ‘পিছিয়ে পড়া’ গণতন্ত্রের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
স্টকহোম-ভিত্তিক সংস্থাটি বিগত ৫০ বছরের গণতান্ত্রিক সূচক ব্যবহার করে তাদের এই বার্ষিক মূল্যায়ন তৈরি করেছে। ১৬০টি দেশকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করে এই তালিকা তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম বিভাগের নাম ‘গণতন্ত্র’, যার মধ্যে পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্রও রয়েছে। দ্বিতীয় বিভাগে ‘হাইব্রিড’ সরকার। আর তৃতীয় বিভাগে রাখা হয়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসটেন্স বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র সমর্থনকারী একটি আন্তঃসরকার সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় সুইডেনের স্টকহোমে অবস্থিত। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্বের গণতন্ত্র পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সংস্থাটি।
এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিকভাবে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ ‘পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্রের’ দেশে বাস করেন। আর বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ হয় পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্র বা ‘হাইব্রিড’ অথবা কর্তৃত্ববাদী শাসনে বাস করেন।
গ্লোবাল স্টেট অফ ডেমোক্রেসি টু থাউজেন্ড টোয়েন্টি ওয়ান শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই বছর আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথমবারের মতো পশ্চাদপসরণকারী বা পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের পিছিয়ে পড়ার পর্বটি কমপক্ষে ২০১৯ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বের ২০টি দেশ কর্তৃত্ববাদের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে মাত্র ৭টি দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বিশ্বে পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্রের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ‘প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র’ ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড এবং স্লোভেনিয়াকেও পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত বছর পিছিয়ে পড়া গণতন্ত্রের তালিকায় থাকা দুটি দেশ ইউক্রেন এবং উত্তর মেসিডোনিয়া এবার বাদ পড়েছে। তাদের অবস্থার উন্নতির পরে এই বছর তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, তুরস্ক, নিকারাগুয়া, সার্বিয়া, পোল্যান্ড এবং ব্রাজিলকে গত এক দশকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গণতান্ত্রিক পতন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বে ৯৮টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল। আর রাশিয়া, মরক্কো এবং তুরস্ক সহ ২০টি ‘হাইব্রিড’ সরকার এবং ৪৭টি কর্তৃত্ববাদী শাসনের রাষ্ট্র ছিল; যার মধ্যে চীন, সৌদি আরব, ইথিওপিয়া এবং ইরান রয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে গণতন্ত্রবিমুখতার বিদ্যমান নেতিবাচক প্রবণতা ‘আরো তীব্র এবং উদ্বেগজনক’ হয়ে উঠেছে।
‘কিছু দেশ, বিশেষ করে হাঙ্গেরি, ভারত, ফিলিপাইন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা গণতান্ত্রিক নিয়ম-কানুন লঙ্ঘনের পরিমাণ বাড়িয়েছে। অর্থাৎ, এমন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে যেগুলো ছিল বৈষম্যমূলক, বেআইনি, অনির্দিষ্ট বা জরুরী প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগহীন’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রসহ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোও ক্রমান্বয়ে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কৌশল অবলম্বন করেছে। গণতন্ত্রের উল্টোপথের এই যাত্রায় তারা তাৎপর্যপূর্ণ জনপ্রিয় সমর্থনও পেয়েছে।
গণতন্ত্রের উল্টোপথের এই যাত্রায় বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বেগজনক কিছু দেশের তালিকায় ব্রাজিল এবং ভারতকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও ২০০০ সাল থেকে ভারত মধ্য-স্তরের গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় আছে।
বাংলাদেশও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠছে বলে এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা জেঁকে বসা দেশের সংখ্যার হিসেবে ২০২০ সাল ছিল সবচেয়ে উদ্বেগজনক। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অগণতান্ত্রিক দেশের শাসকগোষ্ঠী আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে।
Leave a Reply