আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া বেতন দেওয়া শুরু করেছে তালেবান সরকার। তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই আফগানিস্তানে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকিং কার্যক্রম।

বিশেষ করে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আফগানিস্তানের অর্থ জব্দ ও সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার পর দেখা দেয় তীব্র অর্থনৈতিক সংকট।

এতে আটকে যায় সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও।

এবার দীর্ঘদিন পর সরকারি কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার খবর এল তালেবান সরকারের কাছ থেকে। রবিবার পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশটিতে বেশিরভাগ সরকারি কর্মচারী এখনো কাজে ফিরতে পারেনি। তাছাড়া তালেবানর ক্ষমতা দখল করার আগে থেকেই অনেককে কয়েক মাস ধরে বেতন দেওয়া হয়নি। শনিবার থেকে অবশেষে তাদের বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে।

আফগানিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমদ ওয়ালী হকমল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজকে থেকে আমরা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা তিন মাসের বেতন পরিশোধ করবো।

তিনি বলেন, গত ২৩ আগস্ট থেকে হিসাব করে বেতন দেওয়া হবে।

তবে কিছু কর্মচারীকে তালেবানের ক্ষমতা নেওয়ার আগের এক মাসের বকেয়াও পরিশোধ করা হবে। দেশের বিদ্যমান ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এ বেতন পরিশোধ করা হবে। তবে যথাযথভাবে এ কার্যক্রম পরিচালোনা করতে একটু সময়ের প্রয়োজন হবে।

২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে গত ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তার আগেই ১৫ আগস্ট অনেকটা রক্তপাতহীনভাবে কাবুল দখলে নেয় তালেবান। এরপর থেকে টানা কয়েক মাস ধরে চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান।

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটিতে গুলিতে, বোমা বিস্ফোরণে মারা যান শতাধিক মানুষ। ভিটেছাড়া হন বহু দোভাষী। ভেঙে পড়ে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা। এরমধ্যে নতুন সরকার গঠন করে তালেবান। তবে এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তারা। যার ফলে আফগানিস্তানে সব বৈদেশিক অর্থ সহায়তা বন্ধ আছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯০০ কোটি ডলার আটকে রেখেছে। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশটি চরম মানবিক বিপর্যয়ে পড়বে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ বলেছে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আফগানিস্তানের ৪ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রে নিপতিত হবে।

তবে শনিবার তালেবান মুখপাত্র ইনামুল্লাহ সামাঙ্গানি টুইটারে বলেছেন যে, তালেবান প্রশাসনের দৈনিক রাজস্ব সংগ্রহ প্রতিদিনই বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে যে, গত তিন মাসের শেষ ৭৮ কার্যদিবসে, আমরা প্রায় ২৬.৯১৫ বিলিয়ন আফগানি আয় করেছি। আমরা শুধুমাত্র বুধবারেই ৫৫৭ মিলিয়ন আফগানী রাজস্ব সংগ্রহ করেছি’। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের অর্থ প্রদানও শীঘ্রই আবার শুরু হব।