যুক্তরাজ্যের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা অ্যামাজনকে তার নিরাপদ ক্লাউড সিস্টেমে কিছু শীর্ষ ‘গোপন সামগ্রী’ হোস্ট করার জন্য একটি চুক্তি করেছে। এমন একটি সংবাদ জানা গেছে আজ। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানাচ্ছে, জিসিএইচকিউ (জাতীয় যোগাযোগ সদর দপ্তর, যুক্তরাজ্য) উচ্চ নিরাপত্তা ক্লাউড সংগ্রহের বিষয়ে শীর্ষে রয়েছে। এটি এমফিফটিন ও এমসিস্কটিন-এর পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি বিভাগ যেমন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথ অভিযানের সময় ব্যবহার করবে। চুক্তিটি এক বিলিয়ন পাউন্ডের, জানান আইনজীবীরা। এটি যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ডাটা বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তবে এটি সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ জাগাতে পারে। কারণ দেশের সবচেয়ে গোপন তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার এখন একটি একক মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা দ্বারা হোস্ট করা হবে। এ বছরের শুরুর দিকে ফরাসিরা একটি সার্বভৌম ‘ক্লাউড’ তৈরি সমর্থন করেছিল, যা সংবেদনশীল জনসাধারণের তথ্য পরিচালনা করতে ব্যবহার করা হবে।
অ্যামাজন ক্লাউড সার্ভিস ইউনিট বা এডাব্লিউএসের সঙ্গে চুক্তি এ বছর স্বাক্ষরিত হয়। সব গোয়েন্দা সংস্থার সমস্ত ডাটাগুলো যুক্তরাজ্যেই সংরক্ষিত থাকবে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
সূত্র জানায়, এমনকি ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে রাখা তথ্যে অ্যামাজনেরও কোনো অ্যাক্সেস থাকবে না। এটা পরিষ্কার যে- নতুন চুক্তিটি গোয়েন্দা সংস্থার চরদের বিদেশে অবস্থানের সময় আরো সহজেই তথ্য সংগ্রহে অবদান রাখবে। এটি এজেন্সিগুলোকে স্পিচ রিকগনিশন সফ্টওয়্যারের মতো বিশেষজ্ঞ অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম করবে যা ‘স্পট’ করতে পারে এবং রেকর্ডিং থেকে নির্দিষ্ট ভয়েস অনুবাদ করতে পারে।
এডাব্লিউএস ব্যবহার এজেন্সিগুলোকে একে অপরের ডাটাস্টোরগুলোতে দ্রুত অনুসন্ধান পরিচালনা করতে সক্ষম করবে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের প্রাক্তন প্রধান সিয়ারান মার্টিন বলেছেন, ক্লাউড চুক্তিটি নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোকে ‘সপ্তাহ ও মাসের চেয়ে মিনিটের মধ্যে বিপুল পরিমাণ ডাটা থেকে তথ্য পেতে অনুমতি দেবে’ তবে এটি তাদের সক্ষম করার ধারণাটিকে খারিজ করে দিয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে, যুক্তরাজ্যের সাইবার গুপ্তচররা বলেছিল যে তারা বৈশ্বিক বিভ্রান্তি এবং ফাঁদে পড়া শিশুদের অপব্যবহারকারীদের মোকাবেলা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বৈশ্বিক ডাটার প্যাটার্নগুলো উন্মোচন করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেছে। জিসিএইচকিউ বছরের পর বছর ধরে অনুবাদ প্রযুক্তির মতো এ-ওয়ান এর মৌলিক রূপগুলো ব্যবহার করে আসছে কিন্তু এখন এটির ব্যবহার বৃদ্ধি করছে।
গতকাল জিসিএইচকিউ পরিচালক জেরেমি ফ্লেমিং একটি কনফারেন্সে বলেছিলেন যে গত বছরের তুলনায় ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে ‘র্যানসমওয়্যার অ্যাটাক’-এর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাজ্যে গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ আক্রমণ দেখেছি- তবে এর কারণ হলো এটি কাজ করে। অপরাধীরা এটি থেকে খুব ভালো অর্থ উপার্জন করছে এবং প্রায়শই অনুভব করছে যে এটি মূলত অপ্রতিদ্বন্দ্বী।’
এপ্রিলে, ফ্লেমিং বলেছিলেন যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের দৌড়ে যুক্তরাজ্য একটি ‘হিসেব-নিকেশের মুহূর্তের’ মুখোমুখি হয়েছে এবং অবশ্যই মেনে নিতে হবে বা চীনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে। চীন ও রাশিয়ার মতো বিদেশি প্রতিপক্ষের ‘গ্লোবাল ডিজিটাল পরিবেশ’ হুমকির মুখে পড়ার কারণে তিনি দেশটিকে ‘পরিবর্তনশীল আবাসস্থলে পশুর মতো বিকশিত হওয়ার’ আহ্বান জানান। ‘চীনের মতো প্রতিকূল রাষ্ট্রের ডিজিটাল আধিপত্য আমাদের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে’ বলেও তিনি সতর্ক করেন তিনি।
সূত্র : মেইল অনলাইন
Leave a Reply