চলতি বছরের বন্যায় নদী ভাঙ্গন, ফসলহানি, পুকুর, শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট ও রাস্তাঘাটের প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৮ হাজার মানুষ স্থানচ্যুত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা কামনা করছেন। আর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪ কোটি ২ লাখ টাকা ও কৃষকদের প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারি হিসেবে জানা যায়, চলতি বছরের বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৫৩৭.৭৩০ বর্গ কি.মি এলাকার প্লাবিত হয়। বন্যার কারণে ১৭০৫ জন নারী, ৩৬৫০ জন পুরুষ এবং ২৫৯৬ জন শিশু স্থানচ্যুতি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ২৫১ জন নারী, ২৮৫ জন পুরুষ এবং ১১৪ জন শিশু প্রতিবন্ধী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারী হিসেবে মতে, বন্যায় বসত-বাড়ীর মধ্যে আধপাকা বাড়ির ক্ষতির পরিমাণ ৪২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, কাচা-বাড়ীর ক্ষতির পরিমাণ ৯৭ হাজার টাকা বেং কাচা-ঘরে ক্ষতির পরিমাণ ৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।
গৃহপালিত পশু-পাখি ক্ষতির মধ্যে ছাগল বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ৮৫ হাজার টাকা, গরু বাবদ ৪ লক্ষ টাকা, হাঁস বাবদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং মুরগী বাবদ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। শস্যখেতে ক্ষতির মধ্যে জমি ক্ষতির পরিমাণ ৮১ লক্ষ ১৮ হাজার এবং বীজতলায় ২৯ হাজার টাকা। খামার ও হ্যাচারিতে ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৮৫০ টাকা। বিদ্যুৎ বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মসজিদ বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৯ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা এবং মন্দির বাবদ ২২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা।
জনসাধারণের চলাচলের পাকা রাস্তা-ঘাট বাবদ ক্ষতি ৪ কোটি ৮৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা, ইট-খোয়া বাবদ ১২ লক্ষ ৩ হাজার ৬ শত ৯০ টাকা, কাঁচা সড়ক বাবদ ১ কোটি ৬ লক্ষ ৬ হাজার ৭ শত ১০ টাকা, কাঁচা সড়কপথ বাবদ ১ কোটি ৩১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৭ শত ৯০ টাকা। কালভার্ট বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ৩১ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা। নদী বাঁধে ক্ষতির পরিমাণ ৬৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৪কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা,কলেজে ২৪ লক্ষ টাকা এবং মাদ্রাসায় ৪৪ লক্ষ টাকা।
কৃষিভিত্তিক শিল্পতে ক্ষতির পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা, অকৃষিভিত্তিক শিল্পতে ক্ষতি ১২ লক্ষ টাকা। অগভীর নলকূপে ক্ষতির পরিমাণ ১৮ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা, এবং স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্টিন বাবদ ক্ষতি হয়েছে ২২ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। বিভিন্ন জলাধারের মধ্যে পুকুর বাবদ ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ৫ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা ও জলাশয়ে ৬০ লক্ষ টাকা।
স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকে ক্ষতির পরিমাণ ২৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা। মৎস্য উপকরণের দ্রব্যাদি জাল বাবদ ক্ষতি হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। এছাড়াও বন্যার সময় অসংখ্য বসতবাড়ির ঘরের বেড়া খুঁটি ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে কয়েকটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা ঘুরে দাঁড়াতে সরকারী সহায়তা কামনা করেছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, সরকারী হিসেবে চলতি বছরের বন্যায় সব সেক্টর মিলিয়ে ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫ হাজার পরিবারের জন্য ৪ কোটি ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
Leave a Reply