রংপুর সংবাদ-এর যাত্রা শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঠিক আজকের মতো তীব্র প্রতিকূল না হলেও নতুন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরুর সে সময়টা ছিল বিরূপ। ডিজিটাল মাধ্যমের উল্লম্ফন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপুল বিস্তারের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, কাগজে ছাপা সংবাদের প্রতাপ ফুরিয়ে আসছে।
ডিজিটাল মাধ্যমগুলো সংবাদপত্রের ঐতিহ্য, পেশাদারিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতার বিকল্প হতে পারবে কি-না এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সংবাদপত্র যে তার রূপ ও জৌলুশ নিয়ে আগের মতোই টিকে থাকবে এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছেন না। শুধু যে সংবাদপত্র পাঠকের মনোযোগ ছাপা কাগজ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমের দিকে ঘুরে যাচ্ছে, তা নয়। টেলিভিশনের দর্শক চলে যাচ্ছেন ইউটিউব এবং নেটফ্লিক্স-অ্যামাজনসহ নানা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের দিকে। সিনেমার বড় পর্দা থেকে দর্শক চলে যাচ্ছেন ছোট পর্দার দিকে। দর্শকের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপনদাতাও ছুটছেন নতুন মাধ্যমের দিকে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন একটি সংবাদপত্রের প্রকাশনা শুরু করার সিদ্ধান্ত ছিল কঠিন। যেখানে পুুরনো ও প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাগুলো পাঠক হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেখানে নতুন একটি সাপ্তাহিক কীভাবে পাঠকপ্রিয় হতে পারে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলাম আমরা।
কিন্তু আমরা ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম। ক্যালকুলেটিভ ঝুঁকি বলতে পারেন। পেশাদার, বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সম্পাদকীয় নীতিই আমাদের ভরসা। সাংবাদিকতার পরিসর ও মতপ্রকাশের সুযোগ এই সময়ে সীমিত হয়ে আসছে। এসব সীমাবদ্ধতাকে পেশাদারিত্ব দিয়ে মোকাবিলা করতে চেয়েছিলাম আমরা। এক বছরের মধ্যে সে চেষ্টার ফলও পেতে শুরু করেছি। বছর পেরুতে না পেরুতেই রংপুর সংবাদের পাঠক চাহিদা আমাদের কাজকর্মকে আরো বেগবান করেছে।
কিন্তু, সংবাদপত্রের সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায় মহামারীর যে প্রভাব পড়েছে তা থেকে উত্তরণ হয়তো সময়ের ব্যাপার। সংক্রমণের আতঙ্ক কাটলেই পাঠকও ঠিকই ফিরে আসবেন প্রিয় পত্রিকার কাছে। কিন্তু উপার্জনের মূল উৎস যে বিজ্ঞাপন তাতে বিপর্যয় নেমে সংবাদপত্র জগতে গভীর সংকট তৈরি করেছে। এই সংকটের মধ্যেই একঝাঁক মেধাবী সাংবাদিক নিয়ে আমাদের পদচারণা শুরু ।
এই দু:সাহসিক যাত্রাকালে যারা আমাদেরকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে পত্রিকাটির সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি সমাজকল্যানমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহফুজা ফারিহা বর্ষা, উপদেষ্টা সম্পাদক সাহানুর রহমান, নিবার্হী সম্পাদক মনিরুজ্জামান সরকার মজনু, বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুকুল, যুগ্ন বার্তা সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার ভুমিকা রংপুর সংবাদ আজীবন মনে রাখবে। সংবাদপত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে যারা প্রকৃত অর্থেই দায়িত্বশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করছেন তাদের চিহ্নিত করে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রকৃত প্রচারসংখ্যা বিবেচনায় নিলে রংপুরের সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রংপুর সংবাদকে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে সংগ্রাম করতে হবে না।
ক্ষুধা, মন্দা ও কর্মহীনতা সামনের দিনগুলোতে আরও প্রকট হয়ে উঠবে এমনই আশঙ্কা। করোনাভাইরাসের দিনগুলোর মতো সামনের দিনগুলোতেও অবাধ তথ্যপ্রবাহের প্রয়োজন আরও বাড়বে। সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য মানুষের ক্ষুধা বাড়বে। বড় সংকটে মানুষকে পথ দেখানোর জন্য, সঠিক তথ্য দিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রই এখনো শেষ ভরসা। তাই বৃহত্তর প্রয়োজনে সংবাদপত্রের টিকে থাকার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দরকার।
করোনা দুর্যোগে রংপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হারাতে হয়েছে আমাদের। সম্মুখসারিতে থেকে রোগীদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা দিতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকে। আমরা সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। রংপুর সংবাদের দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পনের এই সুযোগে ধন্যবাদ জানাই সব পাঠক, লেখক, সরবরাহ ও বিতরণের দায়িত্বে থাকা এজেন্ট-হকার, বিজ্ঞাপনদাতাকে। তাৎক্ষণিকতার তাড়না মেটানো ছাড়াও তথ্যের আরেক গুণ মননশীলতার ক্ষুধা মেটানো।
তাৎক্ষণিক সংবাদ দুনিয়াজুড়ে কোথাও পাঠকের সেই আস্বাদ মেটাচ্ছে না। খবরের পেছনের খবর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের বিকল্প হতে পারেনি তাৎক্ষণিক সংবাদ দেওয়া মাধ্যমগুলো। তাই মুদ্রিত সংবাদপত্রের আবেদন কমেনি। যেমন কমেনি বইয়ের কদর। সেই বিশ্বাস থেকেই আমাদের এই বিরুদ্ধ স্রোতের যাত্রায় আপনার সাহচর্য ও সহযোগিতা চাই। ধন্যবাদ।
Leave a Reply