রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার অভিরামপুর গ্রামের অসহায় বৃদ্ধা ফেলানির পাশে দাড়ালেন, রংপুরের মানবিক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ।
ফেলানি বেওয়া। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে বড় করেছেন ৩ ছেলেকে। নিজেদের জমিজামা নেই। ছেলেরা বড় হয়ে জমি কিনে ঘর করেছেন। স্বামীকে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে সেখানেই ঠাঁই মিলেছে তার। কিন্তু সেই ছেলেদের ঘরেও ঠিকমতো জায়গা মিলে না। একেক সময় একেক ছেলের বাড়িতে ঘুরতে হয় তাদের। এর মাঝেই পা ভেঙে পঙ্গু হয়ে পড়েন মা। ছেলেদেরও আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কিছুদিন গ্রাম্য ডাক্তার ও কবিরাজের চিকিৎসা করে হাল ছেড়ে দেয় তারা।
সর্বশেষ বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে ছোট ছেলের বাড়িতে ঠাই মেলে পঙ্গু ফেলানির। ছোট ছেলে তাদের রাখেন গোয়াল ঘরে। বাবার জন্য একটা চৌকি থাকলেও পঙ্গু মায়ের স্থান মাটিতে। সেখানে গরু-ছাগল আর হাস-মুরগীর পাশে বস্তা বিছিয়ে ঘুমান তিনি।
ফেসবুকের এক পোস্টে মাধ্যমে জনৈক ব্যক্তি ফেলানীর কষ্ট ও দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন। ফেলানীর কথা জানতে পেরে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) মোঃ আশরাফুল আলম মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে বৃদ্ধার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় বৃদ্ধার ছেলে ও ছেলের বউদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যথাযথ ভরণ-পোষণ ও সেবা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং তাদের ভালো পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ মতো তারা তাদের বাবা-মা কে গোয়াল ঘরের বাহিরে রাখতে সম্মত হন। এরপর পুলিশ সুপার মহোদয়ের পক্ষ থেকে তাদের ১ মাসের বাজার হিসেবে চাল, ডাল, লবণ, তেল, পেয়াজ, মুরগী, সেমাই, মশলা, চিনি ইত্যাদি দেয়া হয় এবং পঙ্গু মায়ের চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ দেয়া হয়। এছাড়া পুলিশ সুপার মহোদয়ের পক্ষ থেকে বৃদ্ধ পঙ্গু মায়ের জন্য একটি হুইল চেয়ার ও উন্নত চিকিৎসার আশ্বাস দেয়া হয়।
মাটিতে পড়ে থাকা পঙ্গু ফেলানী বেওয়া পুলিশ সুপারের উপহার পেয়ে আনন্দে কেদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আইজ কদ্দিন থাকি গোয়াল ঘরোত মাটিত পড়ি আঁচো, কাঁয়ও দেকে না। গরু ছাগলের সাথে এটে পেচ্ছাব-পায়খানা করোং। একনা ভালো মন্দও খাবার পাঁওনা। ওসুধ নাই। চিকিৎসা পাতি নাই। আল্লায় এসপি স্যারক বাঁচে থুক’।
এসময় উপস্থিত জনতা ও এলাকাবাসী এসপি বিপ্লব কুমার সরকার এর এই মানবিক উদ্যোগ দেখে আপ্লুত হন এবং পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply