1. rkarimlalmonirhat@gmail.com : Rezaul Karim Manik : Rezaul Karim Manik
  2. maniklalrangpur@gmail.com : রংপুর সংবাদ : রংপুর সংবাদ
করিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন নির্লোভ ও অকৃপণ সৃষ্টিশীল মানুষ-রাকিবুজ্জামান আহমেদ - রংপুর সংবাদ
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন

করিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন নির্লোভ ও অকৃপণ সৃষ্টিশীল মানুষ-রাকিবুজ্জামান আহমেদ

রাকিবুজ্জামান আহমেদ
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১
  • ১১০ জন নিউজটি পড়েছেন

স্টিভ জবস বলেছেন-মৃত্যুই আমাদের সবার গন্তব্য। কেউ কখনো এটা থেকে পালাতে পারেনি। সেটাই হওয়া উচিৎ, কারণ মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের অন্যতম বড় আবিষ্কার।

আজ কিংবা কাল এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে যেতে হবে। নশ্বর পৃথিবী থেকে অবিনশ্বর জীবনে পদার্পণের মাধ্যম মৃত্যু। কোনো প্রাণীই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না। আজ যারা মারা গেলেন, পরপারে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই তাদের প্রতি জীবিতদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। যেগুলো পালন করার কথা ইসলামে বলা আছে। একই সঙ্গে একজন মানুষ ও মুমিন হিসেবে যে সব আচরণ মৃত ব্যক্তির সঙ্গে করা যাবে না তারও নির্দেশনা ইসলামে আছে।

একজন মুসলমান মারা যাওয়ার সংবাদ শুনে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ এই দোয়াটি পাঠ করে তার মঙ্গল কামনা করতে হয়। যার অর্থ, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তারই সান্নিধ্যে ফিরে যাব। বন্ধু হোক বা শত্রু হোক কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করা যাবে না। কারণ, সব মুসলমান ভাই ভাই।

মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়া, কবর জিয়ারতের কথা হাদিস শরিফে এসেছে। যাতে আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করে ভালো কর্ম সম্পাদন করতে পারি।

পৃথিবীতে কিছু কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে কথা বলতে গেলে সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে এক নিখাদ আনন্দে কথা বলা যায়। তেমনি কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের যোগ্যতা ও স্বকীয়তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বের মানুষ হিসেবে। তাদের নিজস্বতার কারণে। সৃষ্টিশীল প্রচেষ্টা গুলোর কারণে সাধারণ মানুষ তাদের স্মরণ করে নিরন্তন আনন্দে।

এই মানুষগুলো কোন পরিবারের কার আত্মীয়, কিভাবে কি করেছেন, কেন করেছেন অথবা কতটা সহজে বা কষ্ট করে করেছেন, তা আর দেখা হয় না। শুধু দেখা হয় প্রকৃতির মত নির্লোভ এবং অকৃপণ সৃষ্টিশীল একজন মানুষ হিসেবে। যার সৃষ্টি তাকে বাঁচিয়ে রাখে শত শত বছর।

আলফন্সি ডি ল্যামারটাইন বলেন-
কিছু মানুষের মৃত্যু আপনার পুরো পৃথিবীকে শুন্য বানিয়ে দিতে পারে।

তেমনি প্রকৃতির মত নির্লোভ এবং অকৃপণ সৃষ্টিশীল একজন মানুষ আমার প্রিয় দাদাজান লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার আলোকিত বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ।

১৯৫৯ সালে কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘হাজার বক্তৃতার চেয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করলে বক্তব্য পরিষ্কার হয়। শিক্ষার সাগরে অনেক বড় বড় জাহাজ ভাসানো হয়েছে। আজ আমি এক টুকরো কাঠ ভাসালাম। কারো উপকার হবে ভেবে ভাসাই নাই- মনের আনন্দে ভাসালাম। প্রাণের তাগিদে ভাসালাম। লাভ হলো কিনা ভবিষ্যত-ই বলবে।’

আমার দাদাজানের জন্ম হয়েছিল সাধারণ এক কৃষক পরিবারে। ১৯২৩ সালের ১৯ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মদনপুর বৈরাতীর ‘নিলাম্বড় পন্ডিতের’ পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়ার চিলাখাল পাইকান মাদ্রাসা থেকে তিনি খারিজি পাশ করে পাকুরিয়া শরীফ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরে তুষভান্ডার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন লালমনিরহাট জেলার এই কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব। কর্মগুণে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন শেকড় থেকে শিখরে। ১৯৪৫ সালে ব্যবসার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের হাতেখড়ি। ধীরে ধীরে কলকাতা থেকে শুরু করে ভৈরব, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, খুলনা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তিনি ব্যবসা সম্প্রসারিত করেন।

৪৭-এ দেশ বিভাগের পর হতে সকল শোষণ বঞ্চনা উপেক্ষা করে মানুষের জন্য, মানবতার জন্য আলোর বাতিঘর হিসেবে এই উত্তরবঙ্গে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সফল আলোর ফেরিওয়ালা। যার সফল এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রচেষ্টায় আজ হাজার হাজার প্রাণ আলোকিত মানুষ হচ্ছে। কাজ করছে এ দেশের জন্য। এ মাটির জন্য। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে তার উল্লেখযোগ্য দিক ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করা।

এতদঞ্চলে এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে আমার দাদাজান মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ-এর হাতের ছোঁয়া নেই। তাকে প্রায়শ:ই বলতে শুনেছি সুশিক্ষিত হও, জীবন তোমাকে টেনে নিয়ে আলোকিত মানুষ বানাবে।

তৎকালীন সময়ে আমার দাদাজান মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ-কে এলাকার মানুষ বলতো হাজী সাহেব। তাদের সুখে দুখে, হাসি-কান্না, রাগ-অভিমান প্রতিটি পরতে পরতে মানুষ বলতো হাজী সাহেবের কাছে যাও সমাধান একটা বের হবেই। মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদের সরল মানবীয় গুণাবলির দ্বারা এতদঞ্চলের মানুষের নয়নের মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন।

আমার দাদাজানের রাজনৈতিক জীবনের আনুষ্ঠানিক সূচনা বলা যায় ১৯৫৪ সালে। ইউনিয়ন বোর্ডে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন তিনি। একনাগাড়ে ১৬ বছর ইউনিয়ন বোর্ডে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান আমলে কালীগঞ্জে একটি উন্নয়ন পরিষদ গঠন করা হলে তিনি পরিষদের সেক্রেটারি মনোনিত হন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদানের জন্য গভর্নর পুরস্কারে ভূষিত হন।

এরপর আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তরুণ বয়সেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড় আন্দোলনে মুকুন্দ দাসের অন্যতম সহযোগী ছিলেন আমার দাদাজান।

আন্দোলনের ভলান্টিয়ার হিসেবে তুষভান্ডার বাজারে খাজনা বন্ধ করতে গেলে রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবার ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তবে তাতে দমে যাননি। গরীব-দুঃখী মানুষের পাশে থেকে তাদের স্বার্থই তিনি আজীবন উপলব্ধি করেছেন। তারই প্রেরণায় প্রথম শহীদ মিনার ‘চিরঞ্জীব কালীগঞ্জ’ নির্মিত হয়। ১৯৫৯ সালে কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজ। বর্তমানে এটি সরকারি।

১৯৭৩ করিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৭৩ সালে করিমপুর নেছাবিয়া দাখিল মাদ্রাসা ১৯৭৭ সালে করিমপুর নেছারিয়া এতিমখানা এবং ১৯৮৬ সালে সুন্দ্রাহবি নেছারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষাক্ষেত্রে আমার দাদাজান যে অবদান রেখে গেছেন, তা শুধু লালমণিরহাটেই নয়- সারা বাংলাদেশেই বিরল। ১৯৬৩ সালে ‘করিমপুর’ ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করে আমাদের এই এলাকায় ডাক যোগাযোগের সূচনারও অগ্রপথিক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন দাদাজান।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আলহাজ করিম উদ্দিন আহমেদের ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে মাঠে নেমে পড়েন তিনি। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কালীগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের। ইপিআর, আনসার ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করেন মুক্তিবাহিনী, যার প্রধান কার্যালয় ছিল তার নিজস্ব বাসভবন। দেশ মাতৃকার প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসার কারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি এই কাজ করতে পেরেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৪ মাস আমাদের এই এলাকাটি মুক্ত এলাকা থাকায় স্থানীয় যুবকদের এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সময় আমার দাদাজান কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক বিশাল জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। পরে পাক-বাহিনী আমাদের এলাকাটি দখল করে নেয়। করিম উদ্দিন আহমেদ চলে যান ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার ওকড়াবাড়ি। পরে সিতাই থানার ভাড়ালিতে আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি এবং সেখানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে তিনি দুটি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে বাঙ্গালি যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

পরে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেন। এই সময় উত্তরাঞ্চলীয় মুক্তিবাহিনীর সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতে দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা জানেন যে মুক্তিযুদ্ধের শেষ কয়েক মাস তার বাড়িটি পাক-বাহিনী দখল করে নিয়েছিল।

স্বাধীনতার পরে দাদাজান দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধবিধ্বস্ত লালমণিরহাট পুনর্গঠনে। তিনি এলাকার সর্বস্বহারা কৃষকদের মধ্যে হালের গরু বিতরণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। তারই প্রচেষ্টায় এলাকায় চালু হয় রংপুর-দিনাজপুর পল্লী সংস্থা বা আরডিআরএসের কার্যক্রম।

তার সততা, দেশপ্রেম ও সমাজসেবায় মুগ্ধ হয়ে এই এলাকার মানুষ তাকে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য নির্বাচিত করে। আমার দাদাজান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী। ১৯৮৫ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি প্রথম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯০ সালের ১৭ মার্চ তার জ্যেষ্ঠ পুত্র, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, আপনাদের নয়নের মণি, আপনাদের নেতা বর্তমান গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী জনাব নুরুজ্জামান আহমেদ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে দাদাজান রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ বেঁচে ছিলেন ১৯৯১ সালের ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। আজকের এইদিনে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহ পাকের কাছে চলে যান।

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলেছেন-
ভীতুরা মরার আগে হাজার বার মরে। আর সাহসীরা একবারই মরে।

এক জীবনে একজন মানুষ যা কিছু করতে পারে, তার সবই তিনি করে গেছেন। তবে নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য করেছেন। করেছেন সমাজের কল্যাণে। এই অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের জন্য মানুষ তাকে শত বছর ধরে স্মরণ করবে।

আমি ব্যক্তিগত জীবনে সবসময়ই শ্রদ্ধের দাদাজানের আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা করি। আজ পর্যন্ত আমার সাধ্যের মধ্যে মানুষের জন্য যা কিছু করার চেষ্টা করেছি,তা আমার দাদাজানের আদর্শ অনুসরন করেই করেছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন আপনাদের অকুষ্ঠ সমর্থন, দোয়া ও ভালবাসা নিয়ে আমি আমার দাদাজানের আদর্শ ধারণ করেই পথ চলতে চাই।

সমরেশ মজুমদার বলেছেন-
মৃত্যু কি সহজ, কি নিঃশব্দে আসে অথচ মানুষ চিরকালই জীবন নিয়ে গর্ব করে যায়।

আমার দাদাজান বিশ্বাস করতেন- মানুষের সেবা করা, দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো একটি উত্তম ইবাদত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে কিয়ামতের কষ্টসমূহ থেকে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। হাদিস শরীফে আরও এসেছে- যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না আল্লাহও তার প্রতি রহমত করেন না। আমিও দাদাজানের এই আদর্শেই বিশ্বাস করি।

বর্ষিয়ান জ্ঞানতাপস বাবু মহেন্দ্র নাথ রায় দাদাজানের মৃত্যুর পর এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, একটি নক্ষত্রের পতন। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এতে তিনি মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ-এর কিছু মানবীয় বিষয়কে সুনিপুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। মরহুম আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদ তার জীবদ্দশায় দায়িত্বশীলতার সাথে ক্রীড়া, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এমনভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন যে সত্যিই তার কর্ম তাকে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত আলোকিত। তার জীবদ্দশায় এতদঞ্চলের নিরন্ন, অসহায়, মঙ্গাপীড়িত, নদী ভাঙ্গন কবলিত বিপন্ন মানুষের মুখে একটি কথাই থাকত- হাজী সাহেবের কাছে যাও সমাধান একটা হবেই। এই যে নিখাদ ভরসা, কিংবা আস্থা তার প্রতি মানুষের সৃষ্টি হয়েছে এটা শুধু মাত্র সম্ভব হবে, তার পক্ষেই যিনি মানুষের জন্য দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেন।

সবার প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে আলহাজ্ব করিম উদ্দিন আহমেদের মতো দেশ, জাতি ও সমাজের জন্য কাজ করে যাই। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাই এবং আমার দাদাজানের অসম্পূর্ণ কাজকে সম্পন্ন করি।

সর্বশেষ আমার দাদাজান সম্পর্কে বলতে চাই- তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদামাটা মানুষ। কর্ম দিয়ে, সেবা দিয়ে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। এর চেয়ে বেশি পাওয়া একজন মানুষের জীবনে আর কিছু নেই।

দাদাজানের মানবীয় গুণাবলী ও তার পাহাড়সম ব্যক্তিত্বকে নিজের মধ্যে ধারণ ও লালন করে, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ ।সততার জয় অনিবার্য, মানবতার জয় অবশ্যম্ভাবী।

দাদার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমীর উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই-
তুমি সাগরে এক বিন্দু পানি নও
তুমি এক বিন্দু পানিতে গোটা এক সাগর

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | রংপুর সংবাদ.কম
Theme Customization By NewsSun