দিন দিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। কিন্তু মানুষের আচরণে এই প্রাদুর্ভাবজনিত শঙ্কার প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। শহরে, দোকানপাটে মানুষের ভিড় তো আছেই; বেড়েছে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। যে যেখানে আছে, সেখানে থেকেই ঈদ উদ্যাপন করতে বলেছিল সরকার। ঘরমুখো মানুষকে নিরুৎসাহ করতে ঈদের সময় সব ধরনের গণপরিবহন—বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কারণ দলে দলে মানুষ বাড়ি ফিরলে, অর্থাৎ এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে, তাতে সংকট আরো বাড়বে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষ বাড়ি ফেরা বন্ধ করছে না। তারা যেভাবে পারে বাড়িমুখো হয়েছে, আবার অনেকে বাড়ি থেকে ঢাকামুখো হয়েছে।
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিভিন্ন কৌশলে ঢাকা থেকে গ্রামে যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে তারা কোথাও পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হয়ে যাচ্ছে জরুরি কাজের অজুহাত দিয়ে। বাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান, এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সে করে, বিভিন্ন ছোট যানে করে ঢাকা ছাড়ছে। আন্ত জেলা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোও ফিরতি পথে যাত্রী বহন করছে বাড়তি কিছু টাকা কামানোর চেষ্টায়। এভাবে যারা বাড়ির পথ ধরেছে, তারা পথে পথে পুলিশের চেকপোস্টে পড়ছে এবং ফেরিঘাটে চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছে। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছে। কেউ কেউ মৃত্যুর মুখেও পড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
অনেক মানুষের বাড়ি ফেরার কারণ অর্থনৈতিক। এত দিন তারা ঢাকায় বা বড় শহরে আটকা পড়ে ছিল, তাদের দিন কেটেছে চরম দুর্ভোগে। তাই যখন একটু সুযোগ পেয়েছে, তারা বাড়িমুখো হয়েছে। তার পরও পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তাদের উচিত ছিল নিজ অবস্থানে থাকা। সরকার ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে বটে, কিন্তু সেটা যথাযথভাবে কাজ করেনি মূলত দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক কর্মীদের কারণে। সেটা যদি ষোলো আনা কাজ করত, তাহলে হয়তো এতটা বিপন্নতা কাজ করত না এবং তারা নিজ অবস্থানে থাকার চেষ্টা করত। পুলিশের মহাপরিদর্শক জনগণকে ঢাকা থেকে গিয়ে গ্রামে করোনা না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি লোকজনকে চেকপোস্টে থেমে যেতে বলেছেন, ফিরে আসতে বলেছেন।
মানুষকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় তার জন্য মানুষের নিজ অবস্থানে থাকাই এখন সবচেয়ে জরুরি। ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক: রেজাউল করিম মানিক,সম্পাদক রংপুর সংবাদ
Leave a Reply