1. rkarimlalmonirhat@gmail.com : Rezaul Karim Manik : Rezaul Karim Manik
  2. maniklalrangpur@gmail.com : রংপুর সংবাদ : রংপুর সংবাদ
মুসলিম সমাজে সবার জন্য ঈদের আনন্দ - রংপুর সংবাদ
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন

মুসলিম সমাজে সবার জন্য ঈদের আনন্দ

ড. মোস্তফা আস-সিবায়ি (রহ.)
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১
  • ৬০ জন নিউজটি পড়েছেন

আনন্দ ও সহমর্মিতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে ঈদ। পারস্পরিক সহযোগিতায় একপ্রাণ হবে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মুসলিমরা। একে অপরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবে। সুন্দর দামি বস্ত্র থাকবে পরিধেয়। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, ঈদ আমাদের জন্য কী বার্তা নিয়ে আসে? ঈদের সামাজিক-মানবিক উদ্দেশ্য কী? এই দিনে আমাদের কেমন হওয়া উচিত?

ঈদ মনকে দেয় আনন্দ। শরীরকে করে তোলে সতেজ। বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় ভালোবাসা-প্রীতি। আত্মীয়দের প্রতি তৈরি করে সহানুভূতি। সর্বোপরি মানুষের অন্তরে দয়া-অনুকম্পার বার্তা নিয়ে আসে দিনটি। ঈদের সকালে মানুষ ঈদগাহে মায়া-মমতা নিয়ে সমবেত হয়। ভুলে যায় ভেদাভেদ ও হিংসা-বিদ্বেষ। একে অপরের সঙ্গে হাতে হাত মেলায়। এক কাতারে দাঁড়ায়। সামাজিক এই বন্ধন সুদৃঢ় করাই ঈদের মূল বার্তা।

ঈদের সামাজিক উদ্দেশ্যর অন্যতম হলো, সমাজের অসহায়-নিঃস্ব মানুষকে সহযোগিতা করা। প্রতিটি ঘরে আনন্দ ও খুশিকে ছড়িয়ে দেওয়া। তাই শরিয়তে ঈদুল ফিতরের সময় সদকা আদায় এবং ঈদুল আজহায় কোরবানির মতো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিধান আছে, যেন ঈদের আনন্দে সমাজের সব শ্রেণির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ-সংকট দূর করলে মহান আল্লাহ তার আখিরাতের সংকট দূর করবেন। মানুষ কারো সহযোগিতা করলে আল্লাহ তারও সহযোগিতা করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৯৯৬)

ঈদের মানবিক উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর নানা দেশ, জাতি ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা সত্ত্বেও সবার মধ্যে ঐক্যবদ্ধ মনোবল গড়ে তোলা। অসংখ্য মুসলিম মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আনন্দের দিনটি অতিবাহিত করে। সমাজে আনন্দ-উৎসাহের দারুণ এক চিত্র ফুটে ওঠে এই দিনে। তাই মুসলিম সমাজে আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে যেমন একতা থাকে, ঠিক তেমনি দুঃখ-কষ্টের সময়েও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একতা থাকা চাই। মুসলিম সভ্যতায় নানা দেশের নানা ভাষার মানুষের মধ্যে অভিন্ন চিন্তাধারা সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে ঈদের ভূমিকা অপরিসীম। রাসুল (সা.) পারস্পরিক মমতাবোধ ও সহযোগিতার শিক্ষা দিয়ে বলেছেন, ‘ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় মুমিনদের উপমা একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ ব্যথায় আক্রান্ত হলে পুরো দেহ সজাগ হয়ে ওঠে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৬)

ঈদের সময় অসহায়-দরিদ্র পরিবারকে সহযোগিতার অনেক উদ্যোগ দেখা যায়; কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম। প্রতিবেশীর প্রতি থাকে চরম অবহেলা। তাদের খোঁজখবর রাখার সুযোগ হয় না। সুখী-সমৃদ্ধ সমাজের চিত্র এমন নয়। সমৃদ্ধ সমাজের নমুনা ইতিহাসে আছে। একজন মুসলিম ঈদের রাতে নিজের কথা ভাবার আগে পড়শির কথা ভাবে। আপন ছেলের কথা ভাবার আগে ভাইয়ের সন্তানের কথা ভাবে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মাদ বিন উমর ওয়াকিদি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, আমার দুজন বন্ধু ছিল। তাদের একজন হাশেমি বংশের। এক ঈদে আমি চরম অর্থসংকটে পড়ি। আমার স্ত্রী বলল, আমরা না হয় দুঃখ-কষ্ট সইতে পারব; কিন্তু বাচ্চাদের পুুরনো-ছেঁড়া জামা দেখে আমি সুস্থির থাকতে পারব না। অন্তত তাদের জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করুন। হাশেমি বংশের বন্ধুকে চিঠি লিখে কিছু সাহায্য চাই। সে এক হাজার দিরহামের একখানা থলে পাঠাল। কিন্তু দিনারের থলে হাতে আসতেই তৃতীয় বন্ধুর সাহায্যের জন্য লেখা চিঠি এসে পৌঁছল আমার কাছে। থলেটি না খুলেই তার কাছে পাঠিয়ে দিই। অতঃপর স্ত্রীকে পুরো ঘটনা বললাম। সে রাগ করল না, বরং খুশিই হলো। এরই মধ্যে প্রথম হাশেমি বন্ধু থলে হাতে হাজির। এসেই বলল, সত্যি করে বলো, দিরহামগুলো তুমি কী করেছ? তাকে পুরো ঘটনা শোনালাম। আমার কথা শুনে বন্ধুটি বলল, দিনারগুলো তোমাকে দেওয়ার পর আমার কাছে আর কিছুই ছিল না। তাই আমাদের তৃতীয় বন্ধুর কাছে চিঠি লিখি। আর সে আমার থলেটি আমাকে দেয়! অতঃপর আমরা এক হাজার দিরহাম ভাগ করি। তিনজনের জন্য ৩০০ করে ৯০০ দিরহাম। আর আমার স্ত্রীকেও ১০০ দিরহাম দিই। এ ঘটনা খলিফা মামুনের কানে পৌঁছলে তিনি আমাকে ডেকে ঘটনা জিজ্ঞেস করেন। তাঁকে পুরো ঘটনা শোনালে তিনি আমাদের সাত হাজার দিনার দেওয়ার আদেশ করেন। প্রত্যেককে দুই হাজার দিনার এবং স্ত্রীর জন্য এক হাজার দিনার প্রদান করেন। (মুজামুল উদাবা, ৫/৩৯১; ওয়াফায়াতুল আয়ান, ৪/১৫৯)

মহৎ চরিত্রের উত্কৃষ্ট নমুনা হলো এটি। স্বর্ণালি যুগের সর্বোত্তম আদর্শ। কিন্তু আমাদের অন্তরে কি তা রেখাপাত করে? পৃথিবীর কত দেশে পুত্রহারা মায়ের অশ্রু ঝরছে। শোকাহত বিধবা নারী যাতনা ভোগ করছে। মুসলিম উম্মাহর কত প্রাণ শত্রুদের আঘাতে ঝরে পড়ছে। তাদের জন্য আমাদের অন্তর কতটুকু ব্যথিত? অনাহারে থাকা শিশুদের আর্তচিৎকারে আমরা কতটুকু বিচলিত? এক টুকরা রুটির আশায় বসে থাকা শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে অক্ষম আমরা? দোয়ার সময় কি স্মরণ করি তাদের?

ঈদের দিনগুলোতে আনন্দের পাশাপাশি বাস্তুহারা শরণার্থী, অনাথ-দুঃখী মুসলিমদের কথা মনে রাখতে হবে। ঈদের দিনগুলোতে আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ আরো সুদৃঢ় হোক। আমাদের কথায় যেন ফুটে ওঠে অসহায়-অনাথদের দুঃখ-কষ্টের ছাপ। এতে অন্তর কর্মোদ্যম হবে। দানের হাত প্রশস্ত হবে। আমাদের হাসি হোক পরিমিত। চেহারায় ফুটে উঠুক একটুখানি চিন্তারেখা। সমাজের গুরুদায়িত্ব পালনে তা বিরাট ভূমিকা রাখবে।

আমাদের সবাই ঈদের প্রস্তুতি নেবে। প্রয়োজনীয় অন্ন-বস্ত্র ও আনন্দ-বিনোদন পূরণের সবটুকু চেষ্টা করবে। এই প্রস্তুতির পাশাপাশি আল্লাহর জন্য আরেকটি প্রস্তুতি নেওয়াও জরুরি। অসহায়-অনাথদের কষ্ট লাঘবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা। পড়শি ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নিন। তাদের সন্তানদের খোঁজ নিন। আনন্দে তাদেরও শরিক করুন। অন্তত সুন্দর কথা বলে কিংবা মিষ্টি হাসি দিয়ে তাদের সঙ্গে থাকুন। হে আল্লাহ! তোমার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের শক্তি দাও। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করো। আমিন।

 

‘আহকামুস সিয়াম ওয়া ফালসাফাতুহু’ গ্রন্থ থেকে মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহর ভাষান্তর

আপনার সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার দিন

Leave a Reply

এই ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | রংপুর সংবাদ.কম
Theme Customization By NewsSun