লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জামাইয়ের হাতে লাঞ্ছিত হয়ে সমাজের কাছে বিচার প্রার্থী হয়ে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছেন একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা এমন খবর জানা যায়। বাউরা দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট/ অধ্যক্ষ কাজী মাওলানা ফজলুল হকের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁর শ্বশুর বীরমুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় যে কোন মূহুর্তে ফুঁসে উঠতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ তাদের সন্তানরা।
আহত ও অসুস্থ্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গত সোমবার দুপুরের এ ঘটনায় প্রায় ৭ দিন অতিবাহিত হলেও সেই শিক্ষিত জামাই আজ পর্যন্ত শ্বশুরের কাছে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের থাক উল্টো আবার রাতারাতি শ্বশুরের জমিতে গাছ লাগিয়ে দখল ধরেছেন জামাই। এ ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে বলে থানা সুত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়,পাটগ্রাম উপজেলাধীন বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর এলাকার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার তাঁকে ১’৬১ একর জমি লীজ বরাদ্দ দেন। সেই জমির উপরে বসতভিটা তাঁর। রোববার সরেজমিন গিয়ে দেখা ও শোনা যায়,বীরমুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হলে একমাত্র কন্যা সন্তান তুলিকে ৩/৪ বছর বয়সে রেখে চলে যান তার মা। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তমিজ উদ্দিন। দ্বিতীয় স্ত্রী’র ঘরে আরেক কন্যা সন্তান তাহমিনা বেগম। বর্তমানে তিনি একজন সপ্রাবি শিক্ষক। বীরমুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের ছেলে সন্তান না থাকায় আপন শালিকার এক ছেলে আরিফকে পোষ্যপুত্র হিসেবে বড় করেন। প্রেম করে বিয়ে করার অপরাধে ঝগড়াঝাঁটির পর তাকে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন স্বামী -স্ত্রী আরিফ ও সুমনা।
সরকার কর্তৃক শ্বশুরের নামে লীজ বরাদ্দ দেয়া
১’ ৬১ একর জমির মধ্যে সুকৌশলে ফজলুল হক নিজের নামে একবার ২০ শতক আরেকবার ৫ এবং সর্বশেষ ৭ শতক মিলে ৩২ শতাংশ জমি লিজ নেন। সৎ শ্যালক আরিফের নামে কৌশলে কাগজ করা হয় ২০ শতাংশ জমির। মুক্তিযোদ্ধার নামে জাল স্বাক্ষর দিয়ে জমি নেয়ার অভিযোগ উঠলেও ফজলুল হক বলেন, প্রায় ২৪ বছরের খাজনা বাকী থাকায় জমি বরাদ্দ যখন হাতছাড়া হওয়ার পথে গত ২০১৬ সালে এসিল্যান্ড টিএম এ মমিন নোটিশ করেন। তখন মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিনের নামে ১’ ১০ একর, ফজলুল হকের নামে ০’৩২ শতাংশ এবং আরিফের নামে ০’২০ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়।এর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের উপুরি নেন ভূমি কর্তারা।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা যখন টের পান তখন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর নিজ নামীয় জমি অন্যের নামে কেন লীজ হলো অভিযোগ দেন।বাউরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ছোট মেয়ে তাহমিনার নামে ১’১০ একর জমি উইল করে দেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন।
এ খবর ফাঁস হলে বড় মেয়ে তাফহিমা বেগম তুলি তার বাবার বাড়ীতে ছুটে আসেন । এ সময় তুলি, তার স্বামী ফজলুল হক,ছেলে তানভীর আলম তামিম মিলে সবাই মুক্তিযোদ্ধাকে গালিগালাজ করেন। বাগবিতণ্ডায় এক পর্যায়ে তুমুল সংঘর্ষ বাঁধে।ঘটনাস্থলে জামাইয়ের হাতে শ্বশুর লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ উঠে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার কারনে বাবা হয়ে মেয়ের নামে, নানা হয়ে নাতী’র নামে,শ্বশুর হয়ে জামাইয়ের নামেসহ পালিতপুত্র আরিফ ও বউমা সুমনা আক্তারকে মামলার আসামী করে ছোট মেয়ে তাহমিনার হাত দিয়ে এজাহার দাখিল করেছেন মুক্তিযোদ্ধা তমিজ উদ্দিন। জামাই – মেয়ে-নাতী, পালিতপুত্র ও বউমা ৫ জন আসামী।
এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়ে উভয়ের অভিযোগ জিডিমূলে তদন্ত করছেন পুলিশ।এ ব্যাপারে পাটগ্রাম থানা ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন,তদন্ত চলছে।পারিবারিক সম্প্রীতি বোঝায় রাখার স্বার্থে জামাই শ্বশুরের বিষয়টা মীমাংসার পক্ষে অনেকে মত দিয়েছেন।ঈদের পর বসতে চায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
Leave a Reply