অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে ত্বরান্বিত করা এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে টেলিযোগাযোগ খাতে কর কমানোকে সবচেয়ে কার্যকর কৌশলগত নীতি হিসেবে বলছে জিএসএমএ।
গ্লোবাল সিস্টেম মোবাইল কমিউনিকেশন অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) বৃহস্পতিবার দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের কর কাঠামোর নিয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এ সুপারিশ তুলে ধরে।
জিএসএমএ বিশ্বের ৭৫০ টিরও বেশি অপারেটরকে প্রতিনিধিত্ব করে।
জিএসএমএ গবেষণায় বলা হয়, দেশের টেলিযোগযোগ খাতে ৪৪ শতাংশ কর দিতে হয় যা বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই উচ্চ করের চাপ কমানো গেলে সরকার এ খাত হতে বছরে ১৭৮ মিলিয়ন ডলার বাড়তি রাজস্ব পাবে।
অনুষ্ঠানে জিএসএমএ’র এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গরম্যান বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে করনীতির অনুপস্থিতি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপকল্পকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ডিজিটাল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল যুগের মহাসড়ক । ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে বাংলাদেশের অগ্রগতির লাইফ লাইন। এরই ধারাবাহিকতায় টেলিযোগাযোগখাত হচ্ছে ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের মুখ্য বিষয়।গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নের টেলিযোগাযোগখাত সংশ্লিষ্টদের আরও যত্মশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, উন্নত গ্রাহক সেবার বিষয়টি এখনো পর্যাপ্ত নয়।মোবাইল ফোন অপারেটর সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে আরও তৎপর হতে হবে।
মন্ত্রী বর্তমানের ২০০ টাকা সিম ট্যাক্স প্রত্যাহারে বিবেচনা করার কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতের বিদ্যমান কর কাঠামোতে অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে এটি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে।
অ্যামটব সভাপতি ও রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেলিকম খাত বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির ভিত্তি। তবে দুর্ভাগ্যজনক যে কর ব্যবস্থা অর্থনীতিতে এই খাতের অবদানকে যথযথভাবে মূল্যায়নকরে না। টেলিকম খাত যেমন তামাকসহ অন্যান্য শিল্পের তুলনায় যতটা ন্যায্য তার চেয়ে বেশি কর প্রদান করে। এটা ডিজিটাল অবকাঠামো সৃষ্টিতে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। মোবাইল খাতের আর্থ-সামাজিক অবদান বিবেচনা করে এবং ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রা ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারকে বিনিয়োগ-বান্ধব কর ব্যবস্থার প্রবর্তনের অনুরোধ করেন তিনি।
জিএসএমএ প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিতকরণ, সেবার মান উন্নয়নে বাধা এবং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল সেবাদাতাদের প্রতি ১০০ টাকা রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই কর এবং নানা ধরনের রেগুলেটরি ফি হিসেবে প্রদান করতে হয়, যা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যদেশগুলোর এ ধরনের গড় ফি’র প্রায় দ্বিগুণ। এই অর্থ দেশের জনগণকেই পরিশোধ করতে হয় যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ে।
বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের জন্য ২০০ টাকা সিম ট্যাক্স বোঝা হয়ে দাঁড়ায় যদিও তা সাশ্রয়ী করে তোলার জন্য অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটররাই দিয়ে দেয়। এছাড়াও মোবাইল সেবার উপর মোট ৩৫ শতাংশ কনজিউমার ট্যাক্স বা ভোক্তা পর্যায়ে কর আরোপিত আছে যা সরকারের কোযাগারে যুক্ত হয়। এর ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১ শতাংশ সারচার্জ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সাল হতে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরগুলো এ পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বাংলাদেশে সর্বাধিক ৯৫ শতাংশ ফোরজি নেটওয়ার্ক কভারেজ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল থেকে এখনো বঞ্চিত। ডিজিটাল অর্থনীতিতে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ করতে না পারা ২০৩১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে বড় ধরনের বাধা হতে পারে।
সভায় আরও ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রদ্যুত কুমার সরকার এবং অ্যামটবের সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ।
Leave a Reply